তবে নির্বাচন আসা মানেই কদর বেড়ে যায় বস্তিবাসীর। নানা উন্নয়নের ফুলঝুরি নিয়ে প্রার্থীরা হাজির হন তাদের সামনে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এবারও নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছেন তারা। যেনো প্রার্থীর দেওয়া উন্নয়ন আশ্বাসে ভাসছে বস্তিবাসী। নিজেরাই এখন নির্বাচনী ক্যাম্প করে পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বস্তির সবচেয়ে বেশি সমস্যা পানি ও গ্যাসের। তাছাড়া মাদক সমস্যাতো ভয়াবহ। রয়েছে নিরাপত্তার শঙ্কাও। তবে মাদক ভয়াল থাবা থাকলেও ইভটিজিং কমেছে অনেকাংশে।
অন্যদিকে বস্তির অনেকেই বলছেন, বস্তির সার্বিক উন্নয়ন যে করবে, যাকে তারা পাশে পাবেন, মাদকমুক্ত এলাকা যে দিতে পারবেন, এমন কাউকেই তারা বেছে নেবেন। সে প্রার্থী যে দলেরই হোক।
গত কয়েকদিন ধরেই ভোট নিয়ে বেশ সরগরম রয়েছে বস্তি এলাকা। বিশেষ করে মগবাজার, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও ও কড়াইল বস্তি এলাকায় জোর প্রচারণা চলছে। কড়াইল বস্তির জামাই বাজার, বৌবাজার, এরশাদ মাঠ, মশার বাজার, বেলতলা, টি অ্যান্ড টি এলাকায় খোলা হয়েছে নির্বাচনী অফিস।
মগবাজার বস্তিতে একটি নির্বাচনী অফিস থাকলেও ভোটারদের নাস্তা করানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকান। কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও বস্তিতেও একই অবস্থা। এখানে নৌকার প্রাধান্য বেশি দেখা গেছে। ভোট চাওয়ার পাশাপাশি ভোটারসহ সাধারণদের করানো হচ্ছে চা-নাস্তা।
মাহবুব সাইজি নামে মগবাজার বস্তির এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, অনেকে এসেছেন ভোট চাইতে। কাউকে আশ্বাস দেইনি। তবে বস্তিতে পানি-গ্যাসের নিশ্চয়তা যে দেবেন আমরা তাকে ভোট দেব। সে যে দলের প্রার্থী হোক না কেনো।
রাসেল নামে তেজগাঁও বস্তির বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বস্তিতে মাদকের কারবার বেশি। মাদকের কারণে সব কিছুই অনিরাপদ মনে হয়। যে প্রার্থী মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন তাকে আমরা বেছে নেবো।
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইলে। ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের এ বস্তির ভোটার প্রায় ৩০ হাজার।
বস্তির এ ভোট ব্যাংক নিজের করতে জোর প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে প্রচারণা চলছে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল তিশতীর নেতৃত্বে। খোলা হয়েছে একাধিক নির্বাচনী অফিস। আওয়ামী লীগ মনোনিক প্রার্থী চিত্র নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের পক্ষেও চলছে প্রচারণা। পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা। তাদেরও প্রচারে রয়েছে একাধিক অফিস। প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন বাসদের এসএম আহসান হাবীব ও বিএনপির আন্দালিভ রহমান পার্থ।
এ বস্তির অধিবাসীরা বলছেন, শুধু ভোটের সময় বস্তির দিকে সবার নজর থাকে। ভোট শেষে সবাই ভুলে যায়। এখানে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সমস্যা থাকে সারা বছর। যারা বস্তির উন্নয়নে কাজের প্রতিশ্রুতি দেবেন তাকেই আমরা নির্বাচিত করব।
হারুন অর রশিদ পরিবার নিয়ে এ বস্তিতে থাকেন ২৬ বছর ধরে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভোটের আগে আমাদের কথা সবাই বলে। নানা প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট শেষে সবাই চলে যান। অনেকেই এ বস্তিকে উচ্ছেদ করতে চান। তবে এবার আমাদের যে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেবেন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে দেবেন, আমরা তাকেই ভোট দেবো। সে যে দলেরই হোক না কেনো।
আলমগীর হোসেন আলম নামে কড়াইল বস্তির অপর এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমাদের বস্তির কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতেও বস্তিবাসীর উন্নয়নে সরকার সমর্থিত প্রার্থীকে আমরা জয়ী করবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
ইএআর/টিআর/জিপি