ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিশ্ব ইজতেমা

বিশ্ব ইজতেমা গরীবের হজ, এমন কথা বলা গোনাহের কারণ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
বিশ্ব ইজতেমা গরীবের হজ, এমন কথা বলা গোনাহের কারণ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা/ ছবি: কাশেম হারুন-বাংলানিউজ

টঙ্গীসহ দেশ-বিদেশের অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের ইজতেমাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার লক্ষ্যে বেশি বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের করা।

টঙ্গীসহ দেশ-বিদেশের অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের ইজতেমাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার লক্ষ্যে বেশি বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের করা।

এ জন্য ইজতেমায় বিশেষভাবে দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব এবং ঈমান-আমল সংক্রান্ত কথা বলা হয়।

ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে নবী-রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামদের (রা.)কষ্ট ও ত্যাগ-তিতীক্ষার বিভিন্ন ঘটনাবলী শোনানো হয়। এর দ্বারা সাধারণ মানুষ দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগে উৎসাহী হয়। এ জন্য দেখা যায় যে, সারাবছর যে পরিমাণ জামাত দ্বীনের কাজে বের হয়, ইজতেমা থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তার ঈমানের দাওয়াত নিয়ে বের হয়।
 
সাধারণভাবে ইজতেমা সবার জন্য। যে কেউ এখানে আসতে পারেন। তবে তাবলিগের মুরুব্বিদের নির্দেশনা হলো- যারা ইজতেমায় আসবেন তারা যেন ইজতেমায় আসার আগে অন্তত তিন দিন জামাতে সময় দিয়ে পরে আসেন। এর ফলে তার মাঝে একটা দ্বীনি মনোভাব কাজ করবে। ইজতেমার সময়টা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
 
এখন প্রশ্ন হলো- ইজতেমায় আসলে কী হয়? কী শেখানো হয়? কী করে সময় কাটে মুসল্লিদের? আর ইজতেমার দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে কতটুকু?
 
এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, ইজতেমার মূল কাজ হলো- বয়ান শোনা। প্রতিদিন ফজর এবং মাগরিবের নামাজের পর লম্বা সময় নিয়ে বয়ান করা হয়। জোহর এবং আসরের নামাজের পরেও ছোট্ট পরিসরে বয়ান হয়। এর ফাঁকে ফাঁকে বিশেষ শ্রেণী-পেশার মানুষদের নিয়ে আলাদা আলাদা বয়ান হয়। এ সময় মাঠে থাকা অন্যরা তালিমের কাজে ব্যস্ত থাকেন।

এ সব বয়ানের মূল উদ্দেশ্য থাকে, মানুষের মধ্যে ঈমানি চেতনা বৃদ্ধি এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারের ভাবনা তৈরি করে তাদেরকে জামাতে বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। এক্ষেত্রে শুধু বয়ানের দ্বারা সবাই তৈরি হয়ে যায় না। বরং পুরো ইজতেমার সময় জামাতে লোকজনকে বের করার জন্য আলাদাভাবে তাশকিল (উদ্ধু্দ্ধ) করা হয়।

বর্তমান সময়ে কেউ শুধু কয়েকটা বয়ান শুনে ইসলাম পালন শুরু করবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে ইজতেমার মাঠে কিংবা জামাতে যেয়ে যখন কেউ একনাগাড়ে কিছুটা সময় দ্বীনি পরিবেশে থাকে; তখন তার জন্য ইসলাম মানা ও পালন করা অনেকটা সহজ হয়। এ জন্য শুধু ইজতেমা নয়, প্রায় সবক্ষেত্রেই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে মানুষকে বিভিন্ন মেয়াদে জামাতে বের করার চেষ্টা করা হয়।

আর ইজতেমার মোনাজাত হলো, দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে রওয়ানাকারী জামাতের সাথীদের জন্য। ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ইজতেমা শেষ; এটা ভেবে করা হয় না। বরং ইজতেমা থেকে অনেক জামাত দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে বের হয়। এসব জামাত রওয়ানা হওয়ার সময় তাদের উদ্দেশ্য নির্দেশনামূলক একটি বয়ান হয়। যাকে হেদায়েতি বয়ান বলা হয়।

বয়ান শেষে দ্বীনের রাস্তায় বের হওয়া সব জামাতের জন্য, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহতায়ালার রহমত, মদদ আর সাহায্য চেয়ে- বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এই মোনাজাতের পর জামাতগুলো তাদের গন্তব্য জেনে সে উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

হজরত নবী করিম (সা.) কোথাও কোনো দল বা জামাত পাঠালে এভাবে তাদেরকে হেদায়েত, নির্দেশনা ও তাদের জন্য আন্তরিক দোয়া দিয়ে বিদায় দিতেন। এ ধারা পরম্পরায় ইজতেমার মাঠে এই বিশেষ দোয়া করা হয়।

প্রাসঙ্গিকভাবে বলে রাখা ভালো, ইজতেমার মূল আয়োজনে ঈমান-আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির কথা বলা হয়, কোরআন তেলাওয়াত শেখানো হয়, জিকির করা হয়, নবীদের জীবনী পাঠ করে শোনানো হয়, নফল নামাজ পড়তে উৎসাহী করা হয়, পরোপকারী মনোভাব গড়ার অভ্যাস অনুশীলন করানো হয়। এ ছাড়া অনেক বড় জামাতের সঙ্গে শরিক হয়ে নামাজ আদায়ের সুযোগ মেলে ইজতেমার মাঠে। এসব আমল ও দিক বিবেচনায় ইজতেমায় অংশগ্রহণকে সওয়াবের কাজ মনে হয়। তাছাড়া আলাদাভাবে ইজতেমার কোনো ফজিলত নেই, কোনো সওয়াব নেই।

এখন কেউ যদি বলে বা মনে করে যে, শুধু ইজতেমায় আসলেই সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে, কিংবা তিনবার ইজতেমায় গেলে এক হজের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে, ইজতেমা গরিবের হজ- নিঃসন্দেহে এসব ভুল কথা। সবাইকে এসব ধারণা, কথা ও মনোভাব থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ এমন ধারণা পোষণ করলে সেটা সংশোধন করা চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।