ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চটকা জালের মাছ-আলুভাজিতেই দানাপানি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
চটকা জালের মাছ-আলুভাজিতেই দানাপানি ছবি ও ভিডিও আসিফ আজিজ

বজরা, কুড়িগ্রাম: শুকনো খাবার কেনার পয়সা নেই। কাঁচা তরকারির দামও লাগামছাড়া। চরের জমিতে সামান্য যে ফসল ছিলো তাও গেছে তলিয়ে। যৎসামান্য জমানো টাকায় তো চাল কেনা চাই। একবেলা হলেও তো পেটে দানাপানি কিছু দিতে হবে। পরিবারের সদস্যও কম নয়। বাড়ি-ঘর, জমি-জিরাত সব পানির তলে রেখে এসে তীব্র সংকট খাবারের।

এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সেই বানের পানিকেই বেছে নিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের বন্যাকবলিত চর বজরা এলাকার বানভাসিরা। নদী চরাচরে বসবাস করায় তাদের স্বভাবেই রয়েছে মাছ ধরা।

কারও কারও পেশা। তবে এই মুহূর্তে সবাই এক।
সবাই এখন বনে গেছেন জেলে। তৈরি করেছেন স্বল্প খরচের চটকা চাল। ভাসাল নামেও পরিচিতি আছে কোনো কোনো এলাকায়।

চটকা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন বানভাসিরা-ছবি-আসিফ আজিজ
 মুখে কারও হাসি-আনন্দ নেই, থাকার কথাও না। নিজের সামান্য ভিটেমাটি ফেলে এই ১০ ফুট রাস্তায় এখন ঘর-সংসার বজরার বানভাসি মানুষের। হাত দিয়ে সামলানো যায় এমন বাঁশের সঙ্গে চারটি বাঁকানো কঞ্চি বেঁধে তার সঙ্গে জাল জুড়ে দিয়ে বানানো জালকে এ এলাকায় বলে চটকা জাল।
 
তিস্তার পানি ‍উপচে উঠে শুধু বাড়ি-ঘর, ফসলি জমিই গ্রাস করেনি, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। স্রোতের টানে নদীর মাছের সঙ্গে সেসব মাছও ছোটাছুটি করছে পানিতে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চটকা জাল নিয়ে দিনভর মেতে থাকছেন বানভাসিরা। অবশ্য এই মেতে থাকা আনন্দে নয়, পেটের প্রয়োজনে।

চটকা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন বানভাসিরা-ছবি-আসিফ আজিজ
জালে ধরা পড়া পুঁটি, মলা, খলিসা, চিংড়ি, টাকি, কই, শিং, রুই, কাতলা প্রভৃতি মাছই গত পাঁচদিনে হয়ে উঠেছে তাদের প্রধান খাবার। সঙ্গে আলুভাজি আর মোটা চালের ভাত। পুষ্টিকর খাবার বলতে এটুকুই।
 
পরিবারে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাইকে দেখা গেছে মাছ ধরতে। জাল একবার ডুবিয়ে দুই থেকে পাঁচ মিনিট রাখলেই পড়ছে মাছ। তাই লাইন ধরে জাল ফেলতে দেখা গেলো।
 
শিশু আজাহার দুই ঘণ্টায় প্রায় ৪শ’ গ্রামের মতো মাছ পেয়েছে। সে জানালো, এই মাছ নিয়ে গেলে কুটে বেছে রান্না হলেই তবে খাওয়া। অন্যকিছু নাও জুটতে পারে কপালে। তবে প্রতিদিনই মাছ পড়ছে বলে জানালো সে।

রাস্তার পাশে রান্নার প্রস্তুতি-ছবি-আসিফ আজিজ
দু’পাশে বন্যার পানির মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া উঁচু রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া গেলো ছমিরন বিবিকে। মন দিয়ে পাশে একটি পাত্র রেখে নিচে তাকিয়ে কি যেনো করছিলেন। কাছে গিয়ে দেখা গেলো, মাছ কুটছেন। তখন ‍দুপুর আড়াইটা। মাছ ছাড়া অন্য কিছু জোটেনি। তাও খুব বেশি না। এতেই সন্তুষ্ট তিনি। কিন্তু ত্রাণ না পেলে এভাবে বাঁচা যাবে না বলে জানান।

নৌকাতে খাবার খাচ্ছেন বানভাসিরা-ছবি-আসিফ আজিজ

খোলা আকাশের নিচে দুপুরে রান্নার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেলো আকিরন বেগমকে। এতো দেরি কেন আর কি রান্না করছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কি কইরবো এ বেলাত মাছ লি আইছে, আর আলুভাজি করবার লাগছি। পেডে তো কিছু দিতি হবি। কিছু তো কিনবার পারি না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এএ/আরআর

আরও পড়ুন

**রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া
** গম-ভুট্টা-পাটক্ষেতের উপর দিয়ে চলছে নৌকা!
** পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ!
** নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!
** তিতুমীরে হিজড়া-ভিক্ষুকের রাজত্ব!
** পেরেছে কলকাতা-রাজশাহী, পারলো না শুধু ঢাকা!
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে

** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।