আকায়েদের চাচাতো ভাই এমদাদ উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এছাড়া আকায়েদের স্বজনরা আর কোথায় রয়েছেন সেই বিষয়েও তথ্য নিচ্ছে পুলিশ।
স্বজনদের থেকে পাওয়া যেসব তথ্য পুলিশের কাছে আছে তা হচ্ছে, আকায়েদ উল্লাহ’র বাবা প্রয়াত মো. সানাউল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের ভুটান তালুকদার বাড়ি।
প্রায় তিন দশক আগে তার বাবা সন্দ্বীপ ছেড়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর ২০১১ সালে তারা সপরিবারে আমেরিকা চলে যান। দুই বছর আগে সানাউল্লাহ মারা গেছেন। আকায়েদের স্ত্রী এখনো হাজারীবাগে থাকেন। তাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা বাংলানিউজকে বলেন, আইজিপি স্যারের নির্দেশে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত আকায়েদ কিংবা তাদের পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো তথ্য আমরা পাইনি। বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় আকায়েদ কিংবা তার পারিবারের কোনো সদস্য উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন কোনো তথ্যও কেউ দেননি। আকায়েদের বাবা বরং একজন মুক্তিযোদ্ধা।
‘২৭ বছর আগে সানাউল্লাহ পরিবার নিয়ে হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় চলে যান। সেখানে সন্দ্বীপ কলোনিতে তারা থাকতেন। সানাউল্লাহর একটি ছোট দোকান ছিল। সন্দ্বীপের মুছাপুরে বোরহানউদ্দিন তালুকদার নামে সানাউল্লাহর প্রায় ৭৫ বছর বয়সী এক বড় ভাই থাকেন। কিন্তু বোরহান উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। ’ - বলেন এসপি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, আকায়েদের চাচাতো ভাই আমাদের জানিয়েছেন, আমেরিকা যাবার পর দুই বছর আগে একবার সে সন্দ্বীপে এসেছিল। বাংলাদেশে আসার আগে সে ওমরাহ করেছিল। সন্দ্বীপের লোকজন তাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখেছে। কথা কম বলত। তবে তার মধ্যে উগ্র কিছুই দেখেনি।
পুলিশ সুপারের নির্দেশে আকায়েদের বিষয়ে তদন্তের জন্য মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্দ্বীপে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এইচ এম মশিউদ্দৌলা রেজা। তিনি থানায় বসে চাচাতো ভাই এমদাদউল্লাহ ও খালু তুফান কোম্পানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া আকায়েদের গ্রামে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রতিবেশিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।
মশিউদ্দৌলা রেজা বাংলানিউজকে বলেন, আকায়েদ দুই বছর আগে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেন। তার শ্বশুর বাড়ি চাঁদপুরে। তার স্ত্রী ঢাকায় হাজারীবাগে থাকেন। তাদের একটি ছেলে রয়েছে। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরকে জানানো হয়েছে।
‘আকায়েদের পরিবার গ্রাম থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন। সে অর্থে তাদের কোনো বাড়িভিটাও নেই। আকায়েদ দেশে এসে বিয়ে করলেও তার চাচা, চাচাতো ভাইবোন কাউকেই বলেনি। দেশে থাকতে কোনো ধরনের উগ্রপন্থায় তিনি জড়িত ছিল না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তিনি উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েছে বলে তার স্বজনরা ধারণা করছেন ’- বলেন মশিউদ্দৌলা।
সূত্র মতে, চাচাতো ভাই এমদাদ উল্লাহ পুলিশকে জানিয়েছেন, আকায়েদের মামার বাড়ি সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়নে। তার দুই মামা আমেরিকায় বসবাস করেন। মামারাই ২০১১ সালে তাদের পুরো পরিবারকে সেখানে নিয়ে গেছেন। তখন আকায়েদ হাজারীবাগ এলাকায় একটি কলেজে সম্মান শ্রেণিতে পড়তেন।
বিভিন্ন সূত্রে ছাত্রজীবনে আকায়েদের ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যও শুনেছে পুলিশ। তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক রুকন উদ্দিন।
‘আকায়েদের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি। ছাত্রজীবনে শিবির করতো বলে একটা কথা যে বলা হচ্ছে, সেটা আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। ’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আকায়েদ নিউইয়র্কে টেক্সি চালাত। তার বড় ভাই নিউইয়র্কে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছে। তার মা ও দু’বোনও বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। ব্রুকলিনের এভিনিউ এনও ফর্টি এইটথ স্ট্রিটে ১৬৮৯ নম্বর বাসায় থাকছিলেন আকাইদ। ২০১২-২০১৫ মার্চ পর্যন্ত মেয়াদে ট্রাক্সি ও লিমোজিন (টিএলসি) চালাবার লাইসেন্স পেয়েছিল তিনি।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে ম্যানহাটনের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে নিজের শরীরে বাঁধা ‘পাইপ বোমার’ বিস্ফোরণ ঘটান আকায়েদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/এসএইচ