নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এবং আমবাগান শেখ রাসেল মাঠে আলাদাভাবে এই সংগঠনের দুটি পক্ষ বসন্ত উৎসব পালন করছে।
দেশ ও সমাজের নানা সংকটে বোধন আবৃত্তি পরিষদ সামনের সারিতে থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এল প্রাণে’ স্লোগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বসন্ত উৎসব আয়োজন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ। অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ৯টায়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ঢোল বাদন, সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, কথামালা ও র্যালি। অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয়েছে বোধনের সাবেক সভাপতি প্রয়াত রনজিত রক্ষিতকে।
অপরদিকে আমবাগান রেলওয়ে জাদুঘরের পাশে শেখ রাসেল উদ্যানে সকাল আটটা থেকে চলছে ‘বোধন’ এর বসন্ত উৎসব। রাত আটটা পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালায় সকাল ও বিকাল দুই অধিবেশনে আবৃত্তি, একক ও দলীয় সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশন, ঢোলবাদন, যন্ত্রসংগীত ও কথামালা পর্ব রয়েছে। বিকাল তিনটায় আয়োজন করা হয় বসন্তবরণ শোভাযাত্রা।
২০০৫ সাল থেকে নগরের ডিসি হিল চত্বরে পহেলা ফাল্গুন বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছিল বোধন আবৃত্তি পরিষদ। গত বছরের অক্টোবরে সংগঠনের সহযোগি প্রতিষ্ঠান বোধন আবৃত্তি স্কুলের অধ্যক্ষ রণজিৎ রক্ষিতের মৃত্যুর পর সদস্যদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। গত ১৫ ডিসেম্বর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সংগঠনটির আয়োজনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের পর থেকেই কার্যত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায় সদস্যরা।
ওই অনুষ্ঠানে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি থেকে আবৃত্তি করা হয়, যেখানে ওই ঘটনাকে ‘নির্মম গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু হওয়া বোধন আবৃত্তি স্কুলের ৫১তম আবর্তনের নবীনবরণও হয় পৃথক দুটি স্থানে। বর্তমানে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে পঞ্চানন চৌধুরীকে। এছাড়া বোধন আবৃত্তি পরিষদের একপক্ষে আছেন সুজিত রায়, যিনি সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং অন্যপক্ষে আছেন সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল আজিজ।
এদিকে সুজিত রায় সমর্থিত বোধন আবৃত্তি পরিষদের একপক্ষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি আবদুল হালিম দোভাষকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করে। ওইদিন সংগঠন থেকে তিনজনকে বহিষ্কারও করা হয়। তবে আব্দুল আজিজ সমর্থিত পক্ষটি এখনও কোন কমিটি করেনি।
আবদুল হালিম দোভাষ এর উদ্যোগে শহীদ মিনার চত্ত্বরে বোধনের বসন্ত উৎসব আয়োজন করা হয়। আমবাগান শেখ রাসেল মাঠে আব্দুল আজিজ পক্ষের আয়োজনে চলছে বোধনের বসন্ত উৎসব।
শহীদ মিনার চত্বরের বসন্ত উৎসবকেই বোধনের মূল বসন্ত উৎসব দাবি করে সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রণব চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বোধন থেকে যাদের বহিস্কার করা হয়েছে, তাদের সমর্থিতরা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে আলাদাভাবে উৎসব করছে। অনুমতি ছাড়া সংগঠনের নামে এ ধরণের আয়োজন করাটা অন্যায়ের পর্যায়েই পড়ে। তবে তাদের প্রতি শুভ কামনা জানাই।
তিনি বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে বোধনের যাত্রা শুরুর পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনে আমরা অনেকে যুক্ত হয়েছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা এতদূর সংগঠনকে নিয়ে গেছেন, তাদের সাথেই আমরা আছি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই আছি।
আমবাগান মাঠে বোধনের বসন্ত উৎসবের আয়োজক সোহেল আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন। সংসার বড় হলে ভাঙবেই। আমরা কাউকে বহিষ্কার করতে পারিনি, হয়তো এটাই অপরাধ। আমরা মুক্তিযুদ্ধে চেতনা লালন করি। যারা ভুলপথে পরিচালিত হয়েছে, তাদের শুরু থেকেই বোঝানো উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
অপর এক প্র্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও চাই-বোধন আবৃত্তি পরিষদ একসাথেই এমন উৎসবের আয়োজন করুক। আমরা বিভক্তি চাইনা। বোধনের বোধগুলো এক হবে বলে বিশ্বাস রাখছি এখনও।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
এসি/টিসি