নগরের পূর্ব ও পশ্চিম মাদারবাড়ি, জলসা মার্কেট, কদমতলী, শেরশাহ কলোনি এলাকায় গেলে দেখা মিলবে এমন চিত্র।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে পাঁচ শতাধিক জুতো তৈরির কারখানা আছে।
মাদারবাড়ি এলাকায় কয়েকটি জুতোর কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, এক একটি কক্ষে গাদাগাদি করে একসঙ্গে ১২-১৫ জন কাজ করছেন। তাদের একেকজনের হাত ঘুরে তৈরি হচ্ছে নানান রঙের একেক জোড়া জুতো-স্যান্ডেল।
কামাল গেইট এলাকার টপ ফ্যাশন সুজ কারখানার কারিগর মো. শামীম বাংলানিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে ব্যবসায়ীরা অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। তাই ১৩জন মিলে অসহ্য গরমের মধ্যেই দিন-রাত কাজ করছি।
জলসা মার্কেটের পাদুকাশিল্পী মিনহাজ উদ্দীনের কণ্ঠে ঝরলো একরাশ হতাশার সুর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের ১১টি বছর জুতা বানাতেই গেলো। অথচ নিজের বা পরিবারের জন্য কখনও ভালো জুতা কেনা হয়নি। যে মজুরি পাই, তাতে সংসার চালানোই দায়। ’
তবে পূর্ব মাদারবাড়িতে গড়ে ওঠা জুতো কারখানার কয়েকজন মালিক বলছেন, ঈদকে সামনে প্রচুর জুতো তৈরির চাহিদা থাকে। তাই অন্য সময়ের চেয়ে এ সময় কারিগরদের মজুরিও বেশি দেয়া হয়। অন্যসময় যেখানে একজোড়া স্যাণ্ডেলের জন্য ১৫-১৮ টাকা এবং একজোড়া জুতোর জন্য ৪৫-৫০ টাকা দেয়া হয়, এখন সেখানে তাদের দেয়া হচ্ছে ২০-২২ টাকা এবং ৫৫-৬৫ টাকা। বেশিরভাগ কারখানায় অদক্ষ কারিগররা দৈনিক ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা এবং দক্ষ পাদুকাশিল্পীরা ৫শ’ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাচ্ছে। জুতো তৈরির কাঁচামাল ফোম, রাবার, স্টিকার, গাম সবই চিন থেকে আসে। দামও বেড়েছে এসব কাঁচামালের, বেড়েছে প্রতিযোগিতা। ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্পের মানোন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবিও তুললেন তারা।
রাকিব সুজ কারখানার কারিগর মো. জসিম বলেন, অন্যদের দেখাদেখি জুতা বানানোর কাজ শিখেছি। এখন যে কোনও ধরনের জুতো বা স্যান্ডেলের ডিজাইন করতে পারি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাদুকা শিল্প শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইয়াছিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় আছি। ১৪ বছর যাবৎ পূর্ব মাদাবাড়ির সাকসেস সুজ কারখানায় কাজ করছি। এখন ব্যস্ততা বেশি। একেকজন শ্রমিক ১৪-১৫ ঘণ্টা কাজ করছে। কাটিং থেকে শুরু করে ফিনিশিং পর্যন্ত একজোড়া জুতা বানাতে ৪-৫ জন কারিগর কাজ করে। কারখানাগুলোতে দিনে ১৮-২০ ডজন জুতা তৈরি হয়। একজন কারিগর দিনে সর্বোচ্চ ৫-৬শ’ টাকা আয় করে। ’
তিনি বলেন, মাসে ১২-১৫ হাজার টাকায় চলা কষ্টকর। ঈদের পর আয় আরও কমে যায়। ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত এই কাজ করে শেষ সময়ে শূন্য হাতেই ঘরে ফিরতে হয়। কর্মক্ষেত্রে অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কোনও ক্ষতিপূরণ দেয় না মালিকরা।
আগ্রাবাদের পাদুকা ব্যবসায়ী সেলিম জামান বাংলানিউজকে বলেন, দোকান বা শপিংমলগুলোতে চাহিদা এবং মানের বিষয়টি জেনেই জুতো ও স্যাণ্ডেল কারখানা থেকে নিয়ে সরবরাহ দেয়া হয়। তবে এখন ক্রেতাদের আগ্রহ চিন-থাইল্যান্ডের জুতোর দিকে। এসব জুতো আমাদের বাজার দখল করে নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯
এসি/টিসি