সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়।
প্রকল্পের অধীনে এক লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ বর্গফুটের ১৫ তলা লাইব্রেরি ভবন, ৭৭ হাজার ৪৯২ বর্গফুটের আট তলা অডিটোরিয়াম, ৬৫ হাজার বর্গফুটের বেসমেন্টসহ ১১২টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, নতুন শহীদ মিনার তৈরি, মূল সড়কের ওপর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের যাতায়াতের জন্য টানেলের মতো ওভারপাস তৈরি, ১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৫ বর্গফুট জুড়ে পাবলিক প্লাজা, ২৫০ জনের ওপেন এয়ার থিয়েটার, মসজিদ, মার্কেট, পুকুর, ল্যান্ডস্কেপ, ফুড গার্ডেন, ক্যাফেটেরিয়া, মিউজিয়াম নির্মাণ করা হবে।
এ প্রকল্পে ১০০ জনের জন্য একটি, ২০০ জনের জন্য একটি সেমিনার হল এবং ৩৫০ জন ও ৭৮০ জন ধারণক্ষমতার ২টি থিয়েটার হল থাকবে। এ ছাড়া সেমিনার ও মিটিং রুম, জেনারেল লাইব্রেরি, চিলড্রেন’স লাইব্রেরি, নিউজপেপার লাইব্রেরি, রেফারেন্স লাইব্রেরি, সায়েন্স লাইব্রেরি, ট্রেনিং ইউনিট, আইসিটি ইউনিট, গেস্ট হাউস থাকবে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ২টি ১২৫০ কেভি সাব স্টেশন, ২৫০ কেভিএ’র ২টি জেনারেটর থাকবে। আটটি লিফট ও ৯৭৩ টন এয়ারকুলারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মূল পরিকল্পনায়।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হওয়া প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর। যদিও পুরোনো বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল। শেষ হয় গত ২ জুলাই।
প্রকল্পে ২ ফুট ব্যাসের ৪৮ ফুট লম্বা মোট শোর পাইল করা হচ্ছে ৫৭৬টি। ইতোমধ্যে ৩০০ শোর পাইল ড্রাইভ হয়ে গেছে। ১৪ বাই ১৪ ইঞ্চির ৫৮ ফুট দীর্ঘ সার্ভিস পাইল হবে ১ হাজার ৩৪৭টি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নতুন জায়গায় একটি ভবন তৈরি যত সহজ- পুরোনো ভবন ভেঙে কাজটি করা কঠিন। সেই কঠিন কাজটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি আমরা। এটি হবে চট্টগ্রামের একটি আইকনিক স্থাপনা। যেখানে পাঠচর্চা, সংস্কৃতিচর্চা, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনসহ সৃজন ও মননশীল মানুষের মিলনমেলা বসবে প্রতিদিন।
তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে হাইড্রোলিক রোটারি রিগ মেশিন, স্ট্যাটিক পাইল ড্রাইভার, স্কেভেটার, ক্রেন ইত্যাদি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। কল্পলোকে বসানো হয়েছে মিকশ্চার প্ল্যান্ট। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ২ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন এ প্রকল্পে। প্রয়োজনে আরও যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক বাড়ানো হবে।
গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক দৃষ্টিনন্দন একটি কমপ্লেক্স করতে যা যা দরকার সবই রাখা হচ্ছে এ প্রকল্পে। সমস্যা ১৫ তলা লাইব্রেরি ভবন, অডিটোরিয়াম এলাকায় বৃষ্টির জন্য বিঘ্ন ছাড়া কাজ করতে অসুবিধা নেই। তবে মূল সড়কে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসার নতুন পাইপ লাইন ইত্যাদি ইউটিলিটি লাইন সরানো নিয়ে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। প্রথমে আন্ডারপাসের মাধ্যমে শহীদ মিনারে যাতায়াতের পরিকল্পনা করা হলেও পরে তা বাতিল করা হয়। এখন টানেলের মতো ওভারপাস করা হবে। মুসলিম ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্স থেকে শহীদ মিনারে যাতায়াত করা হবে ওভারপাস দিয়ে। ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য আলাদা পথ থাকবে। সব মিলে একটি আকর্ষণীয় কমপ্লেক্স হবে এটি।
জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়া মুসলিম হল অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুপযোগী হয়ে পড়লে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির মুখে সরকার প্রকল্পটি গ্রহণ করে। সংস্কৃতি সংগঠকরা মনে করেন, এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বই এবং তথ্যের চাহিদা যেমন পূরণ হবে তেমনি নগরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি