ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কাজ বন্ধ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মেয়াদ-ব্যয় বাড়বে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
কাজ বন্ধ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মেয়াদ-ব্যয় বাড়বে ...

চট্টগ্রাম: শর্তের বেড়াজালে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশের কাজ। বিকল্প সড়ক চালু না করা, কাজ শুরুর পর বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের কারণে মূলত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কাজ।

ফলে থমকে যাওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এজন্য প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়বে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

ডিসেম্বরের মধ্যে বিকল্প সড়ক চালু করে আবারও কাজ শুরু কথা বলা হলেও সেটিও সম্ভব নয় বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। কারণ ইপিজেড থেকে আউটার রিং রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়কের প্রকল্প এখনও নেওয়া হয়নি।

বিমানবন্দরকেন্দ্রিক যানজট নিরসনে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়।

সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের আমলে নেওয়া প্রকল্পটি নিয়ে রয়েছে একাধিক বিতর্ক। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজারের পরিবর্তে দেওয়ান হাট থেকে শুরু করতেও আন্দোলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের চাপে নকশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে সিডিএ।

পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প, জনগণের টাকা নষ্ট

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প নেওয়ার ফল এটি। এতে জনগণের টাকা নষ্ট ছাড়া কিছুই হয়নি। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের লাইফলাইন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

‘এখানকার নিরাপত্তার পাশাপাশি বন্দর সচল রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বন্দর ঘিরে উন্নয়ন কাজের আগে আরও চিন্তা-ভাবনা দরকার ছিলো। মূলত অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শীতার অভাবে জনগণের টাকা অপচয় হচ্ছে। ’

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। নয়তো বন্দর অচল হয়ে পড়তো। ইতোমধ্যে সেই দৃশ্য দেখা গেছে। সিডিএ দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিকল্প সড়কগুলোকে সচল করতে অন্যান্য সংস্থাগুলোর উচিৎ সিডিএকে সহযোগিতা করা।

তিনি আরও বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে জটিলতা ছিলো। বন্দরের চাপের কারণে সিডিএ ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। মূলত পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প নেওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। কাজ শুরুর আগে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও জটিলতা দেখা যেতে পারে।

পিসি ও অ্যাক্সেস রোড চালু হবে কবে?

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগ্রাবাদ থেকে বারিক বিল্ডিং অংশে কাজ শুরুর আগে অ্যাক্সেস রোড ও পিসি রোড চালু জরুরি। নয়তো ওই অংশে যানজট দেখা দিবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাক্সেস রোড ও পিসি রোডের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। রোড দুইটির কার্পেটিং কাজ বাকি। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

৩ মাসে ইপিজেড থেকে সংযোগ সড়ক

সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে কাজ বন্ধের কারণ- বিকল্প সড়ক চালু না হওয়া। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইপিজেড থেকে আউটার রিং রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক চালুর পর সেই অংশে কাজ শুরুর অনুরোধ করেছে। অথচ এখনও ওই সড়কটির প্রকল্পও নেওয়া হয়নি।

সড়কটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইপিজেড থেকে আউটার রিং রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ বছরের মধ্যে সড়কটি তৈরির লক্ষ্য রয়েছে।

সংযোগ সড়ক না হলেও কাজ শুরু হবে

প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্দর আপত্তি জানালেও প্রকল্প শুরুর আগে তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তখন কোনও আপত্তি ছিলো না সংস্থাটির।

‘তবুও আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত চসিক সময় নিয়ে অ্যাক্সেস রোড ও পিসি রোড চালু করে দিবে বলেছে। সড়ক দুটি চালু না হলেও আমরা আবার কাজ শুরু করে দেব। ’

তিনি আরও বলেন, এখন কাজ চলছে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত। তবে শিগগির পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত কাজ শুরু করা হবে। যেহেতু একটি অংশে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আরেকটি অংশে কাজ শুরুর কথা থাকলেও পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি অন্য অংশে কাজ করে ক্ষতিটা পুষিয়ে দিতে। ’

প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়বে

বিকল্প সড়ক চালু না হওয়া পর্যন্ত সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে কাজ বন্ধ থাকবে। ডিসেম্বরের আগে শুরু হবে না আগ্রাবাদ থেকে বারিক বিল্ডিং অংশের কাজ। অথচ এই দুই অংশের কাজ বর্তমানে চলমান থাকার কথা।

প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা ও বন্ধ রাখার কারণে প্রকল্প মেয়াদ অবশ্যই বাড়বে। পাশাপাশি নতুন অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্তের কারণে ব্যয়ও বাড়বে।

এর আগে যানজটের কারণে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশের কাজ ‘সাময়িক’ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
এসইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।