ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাসা বদল করেই ‘লাখপতি’ রেল কর্মকর্তা

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
বাসা বদল করেই ‘লাখপতি’ রেল কর্মকর্তা ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী কন্ট্রোলের বিভাগীয় রেলযান নিয়ন্ত্রক (ডিটিএনএল) শাহিদ হোসেন খোকন। নিজের জন্য বরাদ্দকৃত বাসা বিক্রি করে তিনি হয়েছেন লাখপতি। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাসা বরাদ্দ দিয়ে ৩১ লাখ টাকা আয় করার অভিযোগ রয়েছে।

শাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৭ সালে তার নামে বরাদ্দ দেওয়া পাহাড়তলীর শহীদ লেইনের এল/২৪৩-বি বাসাটি ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর ২০১৩ সালে ষোলশহর স্টেশনের ই/৮ নম্বর বাসাটি নিজের নামে বরাদ্দ নেন।

৪ মাস না যেতেই ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন প্রহরীর কাছে ডিটিও অফিসের অফিস সহকারী জাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে বাসাটি বিক্রি করে দেন।

ওই সময়ে টাইগার পাসের ১৪/০৩ নম্বর বাসাটি নিজের নামে আবারও বরাদ্দ নেন শাহিদ।

কয়েক মাস না যেতেই সেটিও এক লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেন তিনি।

৫ মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমবাগান কলোনির টি/১৫/বি নম্বর বাসাটি নিজের নামে বরাদ্দ নেন। এটিও ডিটিও অফিসের ওই অফিস সহকারীর মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

দুই বছর পর ২০১৬ সালের মার্চে ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনির ২৪/০২/এল নম্বর বাসাটি আবারও নিজের নামে বরাদ্দ নেন শাহিদ। ওই বছরের অক্টোবরে বাসাটি কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে আবারও বিক্রি করে দেন তিনি।

ওই বছর পাহাড়তলী বাজারে সড়কের পাশে ই/৯ নম্বরের বিশাল এক বাংলো নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে সেটিকে পরিণত করেছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ওই বাসাকে ঘিরে তিনি ৫টি দোকান ও একটি কোচিং সেন্টার বসিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এ জন্য খোকন কোচিং সেন্টারের মালিক থেকে নেন ১৮ লাখ টাকা ।

সূত্র জানায়, শাহিদ হোসেন (খোকন) এসব অনিয়ম করতে পেরেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সহযোগিতায়। তাদের প্রশ্রয়ে ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি অনিয়ম করে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন।

চলতি বছরের ২৬ জুন রেলওয়ের অতিরিক্ত সচিব বরাবর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক চট্টগ্রামের অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম তুলে ধরা হয়। এছাড়া গত ৮ ও ১৫ জুলাই রেলওয়ের সচিবের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

অনিয়ম তদন্তে কমিটি

শাহিদ হোসেনের এসব অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য করা হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবরার হোসেনকে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে শাহিদ হোসেন (খোকন) বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে-সব মিথ্যা ও বানোয়াট।

তবে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিজের নামে ছয়বার বাসা বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বাসা বরাদ্দ নেওয়ার পর ছেড়ে দিতে হয়েছে। কারণ বাসাগুলো আমার জন্য উপযুক্ত ছিলো না’।

সর্বশেষ বরাদ্দ পাওয়া বাংলোতে দোকান ও কোচিং সেন্টারকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দোকান ও কোচিং সেন্টার আমি আসার আগে থেকেই ছিল। আমি আসার পর তাদের চলে যেতে বলেছি। কিন্তু তারা এখনও যায়নি। আমি কোনো টাকার লেনদেন করিনি’।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও আনসার আলী বাংলানিউজকে বলেন, কিছু অনিয়মের বিষয়ে শাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাসির উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।