ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ধনী পরিবারের সন্তানদের টার্গেট হিযবুত তাহরীরের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
ধনী পরিবারের সন্তানদের টার্গেট হিযবুত তাহরীরের

চট্টগ্রাম: মেধাবী শিক্ষার্থী ও সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে সংগঠনে সদস্য করতো হিযবুত তাহরীর উলাই’য়াহ বাংলাদেশ। হিযবুত তাহরীরের উদ্দেশ্য ‘সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার’ করে দেশে ‘খিলাফত রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা।

এজন্য তারা ‘সামরিক বাহিনীকে’ গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নিয়মিত লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার ছাপায়।

হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক প্রধান আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ‘দাওয়াতি কার্যক্রম’ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটি। সংগঠনে সদস্য করার ক্ষেত্রে তারা টার্গেট করে মেধাবী শিক্ষার্থী ও সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের।

টার্গেট করা শিক্ষার্থীকে সংগঠনে সদস্য করার ক্ষেত্রে তারা তিন থেকে চারটি ধাপ অতিক্রম করে। প্রথমত টার্গেট করা শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিয়মিত দেখা ও আড্ডা দেয়। এসব আড্ডা চলে জনসমাগম আছে এমন এলাকায়। নগরের চান্দগাঁও, জিইজি মোড়, বায়েজিদ, ষোলশহর, চকবাজার, জামালখানসহ একাধিক জায়গায় আড্ডা দেয় তারা।

গ্রেফতার হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা।  ফাইল ছবি

আড্ডা পর্বের সময় ঘুনাক্ষরেও টার্গেট করা শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না কিছুই। আড্ডা থেকে যখন ঘনিষ্টতা বাড়ে তখন সেখান থেকে বাছাই করা হয় শিক্ষার্থীদের। এসময় শিক্ষার্থীদের ‘ইসলামিক’ বিষয় সম্পর্কে জানায় সংগঠনের সদস্যরা। তখন শিক্ষার্থীদের ‘মোটিভেশনাল কথাবার্তা’ বলা হয়। ‘মোটিভেটেট’ শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় সংগঠনের ‘দাওয়াত’।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক প্রধান আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দীন মুরাদের আদালতে হাজির করা হয়।

পরে আদালত আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে বাংলানিউজকে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ।

২৬ নভেম্বর জঙ্গিনেতা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের তিন দিনের রিমান্ড শেষে ফের দশ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আব্দুল্লাহ আল মাহফুজকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালত।

আব্দুল্লাহ আল মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউনিটি লিংক নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে হার্ডডিস্কবিহীন পিসি, ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের সাংগঠনিক প্রিন্টার ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে বুধবার (২৭ নভেম্বর) মামলাটির তদন্তভার সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. মঈনুল ইসলামের সুপারভাইজিংয়ে মামলাটির তদন্তভার পেয়েছেন উপ-পরিদর্শক রাছিব খান।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. মঈনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক প্রধান আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমকে পাঁচদিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য আমরা খতিয়ে দেখছি।

তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী ও সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে সংগঠনে সদস্য করতো হিযবুত তাহরীর। জিজ্ঞাসাবাদে আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলম জানিয়েছে-তারা দেশে ‘খিলাফত রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা নিয়মিত লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার ছাপায়।

এ মামলায় পর্যায়ক্রমে অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানান মো. মঈনুল ইসলাম।

গত ২২ নভেম্বর নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে সংগঠনের ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা, হিযবুত তাহরীরের তথ্যসহ দুইটি ল্যাপটপ ও ডিভাইস, একটি মোটর সাইকেল, হিযবুত তাহরীরের প্রচারপত্র, গঠনতন্ত্র, ট্রেনিং ম্যানুয়েল উদ্ধার করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক প্রধান আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলম (৩৯), আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ (৩০), মো. ইমতিয়াজ ইসমাইল (২৫), মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী (২২), মোহাম্মদ নাজমুল হুদা (২৭), মো. লোকমান গনি (২৯), মো. করিম (২৭), আব্দুল্লাহ আল মুনিম (২২), কামরুল হাসান প্রকাশ রানা (২০), মো. আরিফুল ইসলাম (২০), মো. আজিম উদ্দিন (৩১), ফারহান বিন ফরিদ প্রকাশ রাফি (২৩), মো. আজিমুল হুদা (২৪), ওয়ালিদ ইবনে নাজিম (১৫) ও মো. সম্রাট (২২)।

এদের মধ্যে হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক প্রধান আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলম চট্টগ্রামের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজের শিক্ষক। আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলম বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের গুনাগরী এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি বায়েজিদ চক্রেসো কানন আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন।

পুলিশ জানিয়েছে- আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ সাতকানিয়া উপজেলার চর খাগরিয়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি নোভারটিস ফার্মাসিটিক্যালস এর চট্টগ্রাম টেরিটোরি ম্যানেজার। মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী ফাহিম ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা।

মোহাম্মদ নাজমুল হুদা ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। মো. লোকমান গনি মহসিন কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র। মো. আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম সরকারি মডেল কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ওয়ালিদ ইবনে নাজিম ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

অভিযানের সময় হিযবুত তাহরীরের আরও দুই সদস্য আফজাল হোসেন আতিক প্রকাশ আকাশ (৩৫) ও তাহমিদ সুফিয়ান (৩৫) পালিয়ে যায় বলে জানায় পুলিশ। আফজাল হোসেন আতিক প্রকাশ আকাশ একটি স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও তাহমিদ সুফিয়ান একটি ডিজিটাল স্কুলের পরিচালক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।