ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

করোনা আতঙ্কে মলিন চৈত্র সংক্রান্তি

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২০
করোনা আতঙ্কে মলিন চৈত্র সংক্রান্তি করোনা আতঙ্কে মলিন চৈত্র সংক্রান্তি

চট্টগ্রাম: বাংলা বর্ষপঞ্জির মুদ্রিত বর্ষপরিক্রমায় সোমবার (১৩ এপ্রিল) বছরের শেষ অর্থাৎ চৈত্রের শেষ দিন। দিনের সূর্য অস্তমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদায় নেবে ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। বর্ষবিদায় নেওয়ার এ দিনটিকেই বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-নববর্ষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন।
 

এবছর ভিন্ন পরিবেশে উদযাপন করা হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব। করোনা আতঙ্কে মলিন হয়ে গেছে বাঙালির সমস্ত আয়োজন।

জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে পহেলা বৈশাখে নববর্ষ বরণের আয়োজনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কোন ধরনের অনুষ্ঠান বা জনসমাগম না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আবহমানকাল ধরে চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। পাড়ায় পাড়ায় নানা রকম খেলার আয়োজন করা হতো। শহর-গ্রামে বসতো মেলা। কিন্তু করোনা দুর্যোগে ঘরে থাকা মানুষের মনে আনন্দ নেই। তবুও প্রথা মেনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মলিন বিউ ফুল আর নিমপাতায় সাজিয়েছেন ঘরের দরজা-জানালা।

করোনা আতঙ্কে মলিন চৈত্র সংক্রান্তিএদিন ১০৮ ধরনের সবজি দিয়ে পাঁচন (আঞ্চলিক ভাষায় ‘আডোরা’) রান্না করার নিয়ম থাকলেও স্বল্প সময়ের জন্য বসা বাজার থেকে কয়েক পদের সবজি কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

পহেলা বৈশাখের আগের দিন চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারগুলোতে পাঁচনের সবজি বিক্রির ধুম পড়ে যেতো। সবজির সঙ্গে বিক্রি হতো কাঁচা কাঠাল, তারা, কাট্টইস, ডুমুর, তিতা বেগুন, কলার মোচা, গিমাশাক ইত্যাদি। তবে পরিবহন চলাচল অনেকটা বন্ধ থাকায় বাজারে এসব সবজির দেখা মিলছে কম। রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ রিকশা ভ্যানেও বিক্রি হচ্ছে পাঁচনের সবজি। দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি।

রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, পণ্য পরিবহনের গাড়ি কম আসায় এসব উপকরণের দাম বাড়তি।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নগরীর আসকারদিঘীর পাড়, ব্যাটারি গলি, হাজারী  লেইন, জামালখান ও দেওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা পাঁচনের উপকরণ বিক্রি করছেন এক দামেই। কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা করে এসব সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর তা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

করোনা আতঙ্কে মলিন চৈত্র সংক্রান্তিএনায়েত বাজারের বাসিন্দা সুমন দাশ বাংলানিউজকে বলেন, আগে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে পাঁচনের সবজি মিলতো সবখানে। দামও ছিল কম। এখন বিকাল ৫টার মধ্যেই বাজার শেষ। তাই কম সময়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। পাঁচনের সবজি সহ বিভিন্ন তরকারি ও ডালের দাম নেওয়া হচ্ছে বেশি।

এদিকে বকশিরহাটে মোয়া-নাড়ুর দোকানগুলোতেও তেমন ক্রেতার দেখা মিলছে না বলে জানিয়েছেন দোকানীরা। মুড়ি, বুট, বাদাম, শিম বিচি, ভুট্টা, মিষ্টি জিরা দিয়ে তৈরি আটকরই, খইয়ের নাড়ু, কুল (বরই) দিয়ে তৈরি নাড়ু, নারকেলের নাড়ু, তিল-ঘস্যার নাড়ু, তিলের টফি, বাতাসা, চিড়া, খই সহ হরেক রকম খাবারের উপকরণ বিক্রি হচ্ছে দোকানে। নগরীর বাকলিয়া নয়া মসজিদ এবং বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকায় কারখানাগুলোতে বানানো হয় এসব মোয়া-নাড়ু।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রঞ্জন সেন জানান, প্রতি বছর এই সময়টাতে ক্রেতাদের ভিড় থাকতো। এখন বিক্রি অনেক কম। করোনার ভয়ে মানুষ তেমন বাজারে আসছে না। অথচ গত বছর এই সময়ে দম ফেলার সুযোগ মিলেনি।
চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজা, ক্ষেত্রপাল পূজা, জলকেলির আয়োজনও স্থগিত করেছেন আয়োজকরা। বছরের প্রথম দিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা খোলার আয়োজন করা হয়েছে সীমিত। হবে না মিষ্টিমুখও।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আশুতোষ নাথ বাংলানিউজকে বলেন, জনসমাগম এড়াতে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে আবার বন্ধ করে দিচ্ছি। দূরত্ব বজায় রেখে বিকিকিনি চলে। করোনা মোকাবেলায় ধর্মীয় সব অনুষ্ঠানও ঘরে পালন করা হচ্ছে। এবছর হালখাতা খোলার আয়োজন রাখিনি। মুঠোফোনেই চলবে শুভেচ্ছা বিনিময়।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রক্রিয়া হিসেবে সারাদেশে ওয়াজ, মাহফিল, তীর্থযাত্রাসহ সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কনফারেন্সে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। ধর্মীয় বা অন্য যে কোনো ধরনের জমায়েত বন্ধ। এটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, করোনাভাইরাস রোধে জনসমাগম হয় এমন কোনো অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। জনসমাগম হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২০
এসি/এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।