ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বৈশাখের ফুল বিকিকিনিতে ভাটা

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
বৈশাখের ফুল বিকিকিনিতে ভাটা বৈশাখের ফুল বিকিকিনিতে ভাটা। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: নগরের মোমিন রোড ও চেরাগী পাহাড় এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট-বড় ৬২টি ফুলের দোকানের অধিকাংশই এখন বন্ধ। করোনাকালে তাই জমেনি বৈশাখের ফুল বিকিকিনি।
 

বাংলা নববর্ষের দিন মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা নেই। জেলার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল বিক্রির জন্য কয়েকটি দোকান খোলা হয়েছে।

তাদের সংগ্রহে আছে অল্প সংখ্যক রজনীগন্ধা আর জারবেরা।

ফুল বিক্রেতারা জানান, চট্টগ্রামের চাষীদের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ ফুলের যোগান আসতো।

আর ৪০ শতাংশ ফুল আসতো ঢাকা ও যশোরের চাষীদের কাছ থেকে। যশোর থেকে আসতো উন্নতজাতের রজনীগন্ধা, গাঁদা ও গ্লাডিওলাস।

চট্টগ্রামের চকরিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, হাটহাজারীর চাষীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো  গোলাপ, গ্লাডিওলাস ও জারবেরা ফুল। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে আসতো বাহারি রঙের অর্কিড।

কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যান চলাচল একপ্রকার বন্ধ থাকায় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবছর ফুল বিকিকিনিতে ভাটা পড়েছে। আগে থেকে বুকিং করা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিয়ের জন্য ফুল সরবরাহের কার্যাদেশও বাতিল হয়ে গেছে।

বৈশাখের ফুল বিকিকিনিতে ভাটা।  ছবি: উজ্জ্বল ধর

হেভেনস ফ্লাওয়ারের বিক্রয় কর্মী জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পহেলা বৈশাখের দিন রজনীগন্ধার কলির মালা ও মাথার রিং, গোলাপ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এখন এসব ফুলের সরবরাহ নেই। আবার ক্রেতাও তেমন নেই। ডিসি হিল, সিআরবি সহ বিভিন্ন এলাকার বৈশাখী উৎসব বন্ধ। তাই ফুল কেনার তাগিদও নেই কারো। আগের সংগ্রহে থাকা গাঁদা ফুল অনেকটা সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান এই বিক্রয় কর্মী।

নগরের চাকবাজার, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, দামপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা শতাধিক ফুলের দোকানে সরবরাহ ও বিক্রি না থাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দাবি করে চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম বাংলানিউজকে বলেন, ফুল ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ীরা এখন লোকসানের শিকার। ব্যবসা না থাকলেও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, বিক্রয় কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪-৫ লাখ টাকার বিয়ের অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই লোকসান আরও বাড়বে।

এদিকে শুধু ব্যবসায়ীরা নন, লোকসান গুনছেন ফুল চাষিরাও। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে ওঠেছে। দেশের ছয় হাজার হেক্টর জমিতে এখন ফুল চাষ হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণাঞ্চলে পটিয়ার কমলমুন্সির হাট, চন্দনাইশের দোহাজারী, বৈলতলী, ছৈয়দাবাদ, সাতকানিয়ার খাগরিয়া, শঙ্খ নদীর দুই তীর, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকা ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ফুলের চাষ হয়। জাতীয় দিবস সহ বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এখানে প্রতি বছর ৩০-৩৫ লাখ টাকার বেশি ফুল বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে সরবরাহ করতে না পারায় অনেক বাগানেই নষ্ট হচ্ছে ফুল। বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন ফুল চাষ, বাজারজাত ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতরা।

পটিয়ায় ফুল চাষি মো. সাইদুজ্জামান জানান, ফুল চাষ করে এক সময় নিজের স্বচ্ছলতা ফিরলেও এখন বাজারে প্লাস্টিক ফুল আসায় দিন দিন আসল ফুলের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তারপরও আসল ফুলের যে বাজার ছিল, সেটাও করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ফুল বিক্রি করা যাচ্ছে না। বাগানে সার, কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার ও শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যে খরচ পড়েছে, তা উঠেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
এসি/এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।