ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

থাইল্যান্ড

মেরিনের হাসিমুখে ভাসে মমতার বাংলাদেশ!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
মেরিনের হাসিমুখে ভাসে মমতার বাংলাদেশ! ফারহিন রহমান মেরিন ও তার পরিবার

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড): ভিনদেশে কেউ যখন নিজেদের কারো খোঁজ পেয়ে যান তখন আপন ভাবতে পছন্দ করেন। তবে ফারহিন রহমান মেরিন অনেকের কাছে একটু যেনো বেশিই আপন। দিনে দিনে তিনি হয়ে উঠছেন অনেকের প্রিয়পাত্র। আদর করে কেউ ডাকেন ‘মা’ কেউবা ‘মেয়ে’।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে শীর্ষ একটি হাসপাতালে ‘কালচারাল সাপোর্ট অফিসার’ হিসেবে কাজ করছেন এই বাংলাদেশি নারী। বয়স মধ্য ত্রিশে।

পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও মাতৃভূমির মানুষদের জন্যে আন্তরিকভাবে কিছু করে আর নিজের স্বভাবসুলভ হৃদ্যতায় এই ভালোবাসা অর্জন করেছেন তিনি।

‘একবার ভাবুন তো... কতটা বিপদে পড়লে চিকিৎসার জন্যে দেশ থেকে এখানে আসে মানুষ। এখানে সবকিছুই তাদের কাছে নতুন, তখন ছোট্ট একটু সহযোগিতাই অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। ওইটুকুতেই মানুষ খুশি হন। আত্নার আত্নীয় হয়ে ওঠেন,’ বলেন ফারহিন রহমান মেরিন।
ফারহিন রহমান মেরিন ও তার পরিবার
হাসপাতালে মেরিনের কাজ বাংলাদেশসহ সার্কভূক্ত দেশ থেকে আসা রোগীদের সঙ্গে।

বাংলাদেশ থেকে যারা আসেন তাদের নিজের আত্মীয়র মতো মনে হয়। নিজের বাবা-মা কিংবা অন্য কোনও স্বজন হলে যতটুকু করতাম ততটুকু করার চেষ্টা করি, বললেন তিনি।    
 
‘আপনি যদি ভাবেন, একটু দেশের জন্য করা, তা ভাবতেই পারেন। ’

প্রবাসে থেকেও কাজের সুবাদে দেশের সেবা করতে পারাকে সৌভাগ্য বলেই মনে করেন তিনি।

নওঁগা সদরের বাচারি গ্রামের মতিউর রহমানের মেয়ে মেরিন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবার ইচ্ছা ছিলো মেয়ে চিকিৎসক হবে, কিন্তু মেরিন চেয়েছিলেন কর্পোরেট পেশায় যেতে। বিবিএ পড়তেন এশিয়া প্যাসেফিক ইউনির্ভাসিটিতে। সেখানেই পরিচয় শরিফ উল হক সমিতের সাথে। বগুড়ার সমিতও পড়তেন একই ব্যাচে। তারপর প্রেম। সেই পথ ধরে বিয়ে। ক্রেডিট ট্রান্সফার করে দু'জনেই চলে যান ব্যাংককের এজামশন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে অধ্যয়ন শেষে সমিত যোগ দেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর মেরিন বামরুনগ্রাড হাসপাতলে। এখন সেহেমী (১০) সাহিম (৩) নামের দুই সন্তান নিয়ে সুখি জীবন তাদের।
এই হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের অনেকেই থাকেন আসেপাশে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে, জানালেন মেরিন। তার সেবার হাত সেসব অ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্তও বিস্তৃত।

ঈদের দিনে তাদের জন্য মাংস-পোলাও-সেমাই রান্না করে নিয়ে যাই। কী যে খুশি হন যা ভাষায় ব্যাখ্যা করা যাবে না, বলেন তিনি।

অনেকেই আমার ছুটির দিন বেছে সে দিনটাতে হাসপাতাল অ্যাভয়েড করেন, যাতে আমাকে পান, এটাকে আমি আমার প্রাপ্তি মনে করি, বলেন মেরিন।    
 
অনেক সময় রোগীদের হয়ে নিজেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নানা প্রশ্ন করি। রোগীর ডায়াবেটিক, ব্লাড প্রেসার প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বা ওষুধগুলো ঠিক মতো খাচ্ছেন কি'না তা ফোন করে খোঁজ নেই।

‘বেড়াতে এসে কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে কিংবা অসুস্থ হলে তখন অনেকেরই চিকিৎসার টাকা থাকে না। তখন দ্রুত তাদের জন্য সহায়তা চেয়ে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করি। চেষ্টা করি দেশে তাদের স্বজনদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেউ মারা গেলে দূতাবাসের মাধ্যমে মরদেহ দ্রুত স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতেও সহায়তা দেই। ’

প্রবাসে এটুকু সহায়তাকেই অনেকে বেশ বড় করে দেখেন, বলেন তিনি।
 
অনেককেই বলতে শুনেছি ‘মেরিন তুমি ছিলে বলেই আজ আমি সুস্থ্। ভালো জীবনযাপন করছি। তুমিই আমার মা। কেউ বলেন তুমি আমার মেয়ে’। এমন কথায় মনটা ভরে ওঠে।

মেরিনের মুখে হাসিটা যেন চেহারারই অংশ। সারাক্ষণই হাসি জুড়ে থাকে ঠোঁটে-মুখে। আর সেই হাসিমাখা মুখটাই যেন প্রবাসে মমতার এক বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময় ১৮২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এমএমকে

আরও পড়ুন

** দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন
** অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধের শঙ্কা
** তথ্যপ্রযুক্তিতে সুস্থ রাখার এক ফেরিওয়ালা সাজিদ রহমান
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!​
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!

** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!​
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা 
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।