ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হতে পারে: বিশ্বব্যাংক

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হতে পারে: বিশ্বব্যাংক

•    পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর না হলে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে

শ্লথ প্রবৃদ্ধি ও শ্রমবাজারের পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ার কারণে এ বছর বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অতিদরিদ্রের হার বেড়ে ৯.৩ শতাংশ হবে।

সেই সঙ্গে ২০২৫ সালে জাতীয় দারিদ্র্যের হারও বেড়ে হবে ২২.৯ শতাংশ। এ ছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের অর্থনীতি ব্যাহত হবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

ঝুঁকির মুখে থাকা দেশের ব্যাংক খাত শক্তিশালী করতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
গত বুধবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি বছরে শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের প্রকৃত আয় কমতে পারে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথগতি ঝুঁকিতে থাকা গরিব মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এতে বৈষম্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান হারানোর কারণে নিম্নবিত্তের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে, যাঁরা তাঁদের আয়ের বেশির ভাগই ব্যয় করেন প্রাত্যহিক নিত্যপণ্য ক্রয়ে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয় ভাগে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক কর্ম হারিয়েছেন।

অল্প দক্ষ শ্রমিকের মজুরি কমেছে ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষ শ্রমিকের মজুরি কমেছে ০.৫ শতাংশ।
শুধু অতিদারিদ্র্যের হার নয়, জাতীয় দারিদ্র্যের হারও বাড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, অতিদারিদ্র্যের হার ৭.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৯.৩ শতাংশে উঠবে। জাতীয় দারিদ্র্যহার গত বছর ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা বেড়ে ২২.৯ শতাংশ হবে।
২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বিশ্বব্যাংকের হিসাবটি বিবেচনায় আনলে ২০২৫ সাল শেষে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা হবে এক কোটি ৫৮ লাখের মতো। অন্যদিকে জাতীয় দারিদ্র্য হার বা গরিব মানুষের সংখ্যা হবে তিন কোটি ৯০ লাখের মতো। মূলত প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার কারণেই মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায় কিংবা গরিব থেকে আরও গরিব হয়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, এসব চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতের জন্য খাতটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত উচ্চ খেলাপি ঋণের চাপে রয়েছে। এ ছাড়া মূলধনস্বল্পতা, পরিচালন অদক্ষতা, সুশাসনের ঘাটতি, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করা, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং সুবিধাভোগীদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদানের গড়ে ওঠা ব্যবস্থা বছরের পর বছর ব্যাংক খাতের সক্ষমতাকে নষ্ট করে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন ব্যাহত করে, তেমনি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও দুর্বল করে দেয়। রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই খাতের দুর্বলতাগুলো আমলে নিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে জোরালো ও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন ব্যাহত করে, তেমনি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও দুর্বল করে দেয়।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো : ব্যাংক খাতের নীতিকাঠামো উন্নত করতে অগ্রাধিকার প্রদান; আমানত সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা; প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতি; রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক পুনর্গঠন; খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি; সমন্বিত দেউলিয়া আইন প্রণয়ন; ব্যাংকিং আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা; জরুরি প্রয়োজনে তারল্য সহায়তা প্রদানের জন্য একটি নীতিকাঠামো তৈরি; ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলোর অনুশীলন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, কিছু কিছু খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, সরকারি ও করপোরেট খাতে সুশাসন আরও সংহত করা। তৃতীয়ত, দেশে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যে চাহিদা, তা মেটাতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। চতুর্থত, বাংলাদেশের আর্থিক খাত যেভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে, তাতে জরুরি ভিত্তিতে এই খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা দরকার। এ জন্য নীতি প্রণেতাদের কার্যকর সমাধান পদ্ধতি খুঁজে বের করা দরকার।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিলেও পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর না হলে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। আছে নীতির ধারাবাহিকতার অনিশ্চয়তা। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতের অমিলের কারণে রাজনৈতিক উত্তেজনা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। এসব কারণে অর্থনীতি ব্যাহত হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর না হলে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির প্রভাব চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন একটা পড়বে না। আর্থিক খাতের সংস্কার, বাণিজ্য সহজীকরণ ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট : ট্যাক্সিং টাইমস’-এর পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হতে পারে। গত জানুয়ারি মাসে ৪.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। নতুন পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪.৯ শতাংশ হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।