একপর্যায়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিদেশি জাতের একটি গরুর বাছুর কিনে শুরু করেন গাভি পালন। এটাই যেন তার অভাব মোচনের শুরু।
এতক্ষণ গাভী পালন করে স্বাবলম্বী খামারি সুভাষ চাকমার কথা হচ্ছিল। রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসি এবং ছোট ছেলে মালেশিয়ায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লেখা-পড়ার পাঠ চুকাচ্ছেন। মেয়েটা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
সুভাষ বাংলানিউজকে জানান, ১০ বছর আগে তার সংসারে চরম অভাব ছিলো। এখন অভাব পালিয়ে গেছে। স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী চাকমাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি খামারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
বর্তমানে তার খামারে ৮টি গাভী এবং ৩টি বাচুর রয়েছে। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ১২ লাখ টাকারও বেশি। এর আগে খামার থেকে ৫টি গরু বিক্রি করেছেন তিন লাখ টাকায়। পাঁচ শতক জায়গায় তার খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিদিন গড়ে খামার থেকে ৪০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। পাইকারি দামে প্রতি লিটার ৭০ টাকা এবং খুচরা দামে প্রতি লিটার ৭৫ টাকায় বিক্রি করেন দুধ।
সুভাষ আরও জানান, গাভী পালনের পাশাপাশি তার ফার্মের পার্শ্ববর্তী স্থানে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করেছেন। এ গ্যাস দিয়ে নিজ পরিবারের রান্নার কাজে ব্যবহার করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আরো ৫টি পরিবারকে মাসিক ৭০০ টাকা হারে গ্যাস সরবরাহ করছেন।
খামারের কিছু দূরে তিন শতক জায়গায় গড়ে তুলেছেন নার্সারি। এ নার্সারিতে ৫০ জাতের ফুল পাওয়া যায়। যেমন বিদেশি জাতের মধ্যে- বাগান বিলাস, স্থলপদ্ম, ব্লিডিং হার্ট, হাইডেন জিয়া আর দেশি জাতের মধ্যে জবা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, শালফিয়া, স্টার, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা উল্লেখযোগ্য। এ নার্সারি থেকে প্রতি বছরে আয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকার মতো।
বাড়ির আঙিনায় মাশরুমের চাষ করছেন। মাশরুম থেকে প্রতি বছরে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো।
এছাড়া তার পার্শ্ববর্তী চার শতক জায়গায় গড়ে তুলেছেন মিশ্র জাতের ফল বাগান। সেখান থেকে বছরে আয় করেন লাখ টাকা।
সুভাষ জানান, পরিশ্রম মানুষকে সফলতা এনে দেয়। জীবনে হতাশ না হয়ে পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে সফলতা ধরা দেবে নিশ্চিত।
সুভাষের স্ত্রী লক্ষ্মী দেবী চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ১০ বছর ধরে অভাবে থেকে পরিশ্রম করে বর্তমানে আমরা সুখের মুখ দেখেছি। এখন গাভী পালনের টাকায় ঘুরছে আমাদের সংসারের চাকা ঘুরছে।
সুভাষের এমন বহুমুখি সফলতায় গ্রামের মানুষের কাছে তিনি এখন রোল মডেল। তার দেখাদেখি অনেকে গাভী পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং সংসারের চাকা ঘুরাচ্ছেন।
সুভাষ সম্পর্কে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুসুম চাকমা বাংলানিউজকে জানান, সুভাষ আমাদের গ্রামের গর্ব। তাকে দেখে স্থানীয় বেকার যুবক ও নারীরা গাভী পালনের দিকে ঝুঁকছে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, সুভাষের সঙ্গে আজ থেকে ১০ বছর আগে আমার পরিচয় ঘটে। তার অভাবের কথা শুনে আমি তাকে গাভি পালনে উদ্বুদ্ধ করি। বর্তমানে তিনি সফল। আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
আরএ