সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের মাধ্যমে পরিচিত এ ফলটির চাষাবাদ এখন হচ্ছে বরিশালে। নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের করমজা এলাকায় সৌখিন চাষি গিয়াস উদ্দিন লিটু (৪৫) এবার সাম্মামের চাষ করেছেন।
হলুদ রঙের এ ফলটি দেখতে ভিন্নরকম হওয়ায় এবং খেতে খুবই মিষ্টি হওয়ায় অনেকেই কিনছেন সাম্মাম। তবে এদেশের মানুষের কাছে রহস্যে ঘেরা এ ফলটি দেখতেই বেশি মানুষ ভিড় করেন চাষি লিটুর কাছে।
গিয়াস উদ্দিন লিটু একসময় পল্লীবিদ্যুতের চুক্তিভিত্তিক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। চাষাবাদে বিশেষ করে সবজি ও ফল চাষে দীর্ঘদিনের আগ্রহ তার। আর গত কয়েকবছর ধরে ভিন্ন ও নতুন নতুন জাতের ফল এবং সবজি উৎপাদন করে বেশ আলোচনায় রয়েছেন তিনি। তার এ কর্মকাণ্ড দেখে উৎসাহিত হয়ে অনেক সৌখিন চাষিও ভিন্ন ও নতুন নতুন জাতের ফল উৎপাদনে ঝুঁকছেন।
লিটু জানান, নিজের ও বাড়ির পাশের কিছু জমিতে তিনি চাষাবাদ করেন। তিন-চার বছর আগে অফসিজনের তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন। এরপর ধারাবাহিকতায় সবজির পাশাপাশি পেয়ারা, মাল্টা, বিভিন্ন জাতের (কানিয়া, সনিয়া, সুইট ব্লাক-২), সুইট মেলন বা সাম্মাম বা ফ্রুটিরও বেশ কয়েকটি জাতের চাষ করেন। যার প্রত্যেকটিতেই তিনি উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।
তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহে ২শ কেজি সাম্মাম বিক্রি করেছেন তিনি। পাইকারি দেড়শ টাকা কেজি দরে ফল বিক্রেতারা সাম্মাম কিনছেন। পাইকারদের কাছে এ ফল বিক্রি করার পাশাপাশি নিজেও নগরের লাইন রোডের মেসার্স বাকেরগঞ্জ বীজ ভাণ্ডারের সামনে ও নগরের বগুরারোডের খামার বাড়ির সামনে বসে এ ফল বিক্রি করছেন। তবে ফলটি কেনার চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা নিয়ে, ফলে প্রতিনিয়ত লোকজন যাচ্ছে তার বাড়িতে ক্ষেত দেখতে।
গিয়াস উদ্দিন লিটু চাষাবাদ সম্পর্কে বলেন, মেলন সাধারণত খোলা মাঠে চাষ করা বা উৎপাদন করা অনেক কঠিন কাজ। খোলা মাঠে চাষ করতে গেলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, কারণ এটি অনেক স্পর্শকাতর একটি ফসল। এটা মরুর দেশের ফল হলেও আমাদের এখানে এর সফল চাষ হলো। তবে চাষে লক্ষণীয় মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে হতে হবে যাতে তলদেশ পর্যন্ত সেচের ব্যবস্থা হয়, মাটির উপরের অংশে কোনোভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, সাম্মাম ফলের রোগবালাই তেমন নেই বললেই চলে, গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়। আর এ ফল গাছের সঠিকভাবে চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন ভালো মতো হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। তবে ফলের ওজনে লতা ছিঁড়ে পড়ার ভয়ে একটু বড় হওয়ার পরপরই ফলগুলো ব্যাগিং করতে হয়।
‘ভাদ্র মাসে সাম্মামের বীজ বপন করি ২০ শতাংশ জমিতে। পাশাপাশি তরমুজেরও চাষ করেছি। বীজ বপনের মাত্র ৪০ দিনের মাথায় সাম্মামের গাছে ফল ধরেছে। '
সরেজমিনে তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, অনেকটা শসা গাছের মতো মাচায় লতাজাতীয় সাম্মাম গাছগুলোতে ঝুলছে সাম্মাম ফল।
নগরের লাইনরোডের বাকেরগঞ্জ বীজ ভাণ্ডারের স্বত্তাধিকারী এস এম জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের ফলের বীজ সংগ্রহ করি। আর লিটু সেখান থেকে সম্পূর্ণ আলাদ কিছু ফলের বীজ সব সময় সংগ্রহ করেন। এসব ফলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিল রেখে তিনি বিক্রির দর ঠিক করেন লিটু।
তিনি বলেন, সাম্মাম পাকা ফ্রুটি বা বাঙ্গির ঘ্রাণ সংবলিত ফলটির স্বাদ অত্যন্ত মিষ্টি। ভেতরের রং পাকা পেঁপের মতো। অনেকে এ ফল কিনছেন আবার অনেকে দেখছেন।
আর ক্রেতারা বলছেন, দাম আরও কমানো সম্ভব হলে এ ফলের চাহিদা বাড়তো।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা হক বাংলানিউজকে বলেন, সাম্মাম ফলটি মূলত মরুভূমি অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে সৌদিআরবসহ অন্য মরভূমির দেশ থেকেই এ ফলের বীজ আনা হয়েছে। বরিশালে শুধু গিয়াস উদ্দিনই সাম্মাম ফলের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন তিনি। কারণ, দেশি ফলের চেয়ে সাম্মামের দাম একটু বেশি, উৎপাদন খরচ কম। মাচায় চাষ করতে হয় সাম্মাম। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম। বরিশালের আবহাওয়া সাম্মাম চাষের জন্য যথেষ্ট অনুকূল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
এমএস/এএ