তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা না করে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা করতে পারলে স্টিল বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড মিলনায়তনে দৈনিক কালের কণ্ঠ-শাহরিয়ার স্টিল (এসএসআরএম) আয়োজিত ‘স্টিল/ইস্পাত শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা একথা বলেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সারাবিশ্বে এ খাতে প্রণোদনা দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে তিন শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ হার না কমালে শিল্প বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সহায়ক রাখতে হবে। সরকার সহায়তা করলেই ইস্পাত শিল্প এগিয়ে যাবে।
এ শিল্পে দেশে যেসব পণ্য উৎপাদন করা হয়, একই পণ্যে যাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ না দেওয়া হয়, সেটা সরকারকে দেখতে হবে। এটা করা না হলে দেশি উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে বলে মত তাদের।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
সঞ্চালকের বক্তব্যে কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ১৫ বছর আগেও স্টিল/ইস্পাত শিল্প এত অগ্রসর ছিল না। এখন এটি সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। এ শিল্প দেশের সুফল বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এ দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নতির চূড়ান্ত পথে রয়েছে। আমাদের সবার উচিত নিজ থেকে দেশের জন্য কাজ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোজ কালের কণ্ঠ পড়েন, আমরা এ গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা তার কাছে পৌঁছাতে পারবো।
কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, স্টিল/ইস্পাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। এ শিল্পের অবদান মানুষের কাছে তুলে ধরতেই এ বৈঠক।
তিনি বলেন, এ শিল্প মানুষের মেরুদণ্ডের মতো। মানুষ যেমন মেরুদণ্ডের ওপর টিকে থাকে, তেমনই ভবন দাঁড়িয়ে থাকে স্টিলের ওপর। সুতরাং এ শিল্পকে অবহেলা করলে চলবে না।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. ফাহমিদা গুলশান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা না করে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনে গুরুত্ব দিতে হবে। স্পেশালাইজড পণ্য উৎপাদন করতে পারলে রপ্তানিও করা যাবে।
তিনি বলেন, এ শিল্পের কোথাও আরএমডি নেই। ইন্ডাস্ট্রির পরিবেশ উন্নত করতে হবে। নিরাপত্তার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। মান নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। গুণগত মান নিশ্চিত করতে ল্যাবরেটরি তৈরি জরুরি।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, স্টিল/ইস্পাত তৈরিতে পরিবেশের ব্যাপারে বিএসটিআই যে শর্ত দিয়েছে, এসপিআই ২০০ মাত্রা বেঁধে দিলে শিল্প বিকাশে সমস্যা। স্টিল মিলের জন্য এসপিআই যেন ৫০০ করা হয়।
বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রশিদ জুয়েল বলেন, নতুন বাজেটে কর আরোপ এ শিল্প বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন বাজেটে কর আরোপের ফলে পণ্যের দাম বাড়বে। সবশেষে ভোক্তার ওপরই এর প্রভাব পড়বে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, স্টির/ইস্পাত শিল্প এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, একে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরের বৃদ্ধিতে সহায়তা না করলে ভবিষ্যৎ নেই।
আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন, শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. আবুল কাশেম, রানিং রি-রোলিং মিলসের চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী, দেশীয় স্ক্র্যাব সাপ্লাইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওসমান ভূইয়া, তিতাস গ্যাসের জিএম আব্দুল ওহাব তালুকদার, রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী, এনার্জি প্যাকের এমডি হুমায়ুন রশিদ, পিডিপির সদস্য সাঈদ আহমেদ, বিএসটিআইয়ের পরিচালক সাজ্জাদুল বারি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
টিএম/একে