বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে চলমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৫ তম আসরে গিয়ে দেখা যায় কারুপণ্য-শতরঞ্জি নামক প্রতিষ্ঠানের এই প্যাভিলিয়নটি। তাছাড়া এই প্যাভিলিয়নটি যেন মানুষের সেলফি তোলার জন্য একটি অন্যতম স্থান।
সামিয়া নামে ‘কারুপণ্য-শতরঞ্জি’ প্যাভিলিয়নটিতে আগত একজন দর্শনার্থী বাংলানিউজকে বলেন, এই পণ্যগুলোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করি। গতবার টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় যেগুলো কিনতে পারিনি এইবার সেগুলোই প্রথমে কিনছি। এখানে আসলে কেনার মত অনেক কিছুই আছে। জাতীয় ঘর সাজালি ঘরটাও আসলে অন্যরকম রূপ লাভ করে। এসব পণ্য সাধারণত আমরা টিভিতে বা ডকুমেন্টারিতে আমাদের ঐতিহ্য হিসেবে দেখে থাকি। বাজারে এগুলোর দেখা একেবারেই পাওয়া যায় না। এদিকে এই প্যাভিলিয়নটিতেই লক্ষ্য করা গেছে সেলফি তোলার হিড়িক। ব্রাজিলিয়ান টিন ভেতরে ও বাইরে সমানে চলছে সেলফি তোলা। বান্ধবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ইমা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই একটিমাত্র প্যাভিলিয়ান যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ডটা অনেক সুন্দর আসে। আর এখানকার পণ্যগুলো অনেক এক্সক্লুসিভ এমনকি দামও নাগালের মধ্যে। তাই নিজে পণ্য কেনা ছাড়াও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাইকে দেখার ব্যবস্থা করে দেবো। তাছাড়া ছবিও সুন্দর আসছে।
কারুপণ্যের সেলস ইনচার্জ মো. আব্দুল জলিল সামগ্রিক বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বিভিন্ন আকারের শতরঞ্জি রয়েছে। শতরঞ্জিগুলো সাধারণত সুতি, অ্যাক্রিলিক সুতি, শ্যানেল সুতি ও উলের সুতা দিয়ে তৈরি হয়। আমাদের কার্যক্রম মূলত রংপুরবাসী। সেখানকার দরিদ্র মানুষরা এসব পণ্য তৈরি করে। মূলত শতরঞ্জি এটা হচ্ছে আমাদের একটি হারিয়ে যাওয়া সম্পদ। এজন্য এটিকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়ে বিক্রি করে থাকি। এখানে আসলে মনে হয় যে পুরো বাংলাদেশের স্থানীয় পণ্যগুলো পাওয়া যায় এটাই আসলে মজার ব্যাপার এবং সেগুলোকে বাচিঁয়ে তোলাই আসলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। যে কারণে আমাদের লাভ না হলেও আমরা ছাড় দিয়ে অনেক কিছুই বিক্রি করছি। এবারের পণ্যগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, বাথরুমের সামনে ব্যবহার করার জন্য আমরা পাপস নিয়ে এসেছি। যার দুটো কিনলে দুটো ফ্রি দিচ্ছি। পাটের তৈরি আউট ডোর ম্যাট একটি কিনলে একটি ফ্রি দিচ্ছি। ডাইনিং টেবিল ম্যাটও রয়েছে। শুধুমাত্র সুতার তৈরি পণ্য নয় আমাদের রয়েছে জেলে, কামার, কুমার তাদের তৈরি বিভিন্ন রকম ব্যবহার্য জিনিসপত্র। যা তারা বিক্রির জন্যও তৈরি করে। দর্শকরা কারুপণ্যের স্টল ২০০৩ সাল থেকেই বাণিজ্যমেলায় দেখছেন। ২০০৭ সাল থেকে আমরা প্যাভিলিয়ান এবং আমাদের মত করে সাজাই। এখানে ক্রেতারা এসে নিজেরাই নিজেদের পণ্যগুলো খুঁজে নেয়।
আব্দুল জলিল আরও বলেন, দেশীয় আমেজ বজায় রাখতে কিংবা এই পণ্যের প্রতি মানুষকে আকর্ষণ করতে আমাদের সাজসজ্জাটাও মূলত এমনভাবেই। যেমন আমরা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঝুড়ি লাইটের কভার হিসেবে ব্যবহার করেছি। একটু দেখতে যেমন সুন্দর হচ্ছে দর্শকরাও তেমন আকর্ষিত হচ্ছে। ফলে এগুলোর কদর বাড়ছে। এগুলোর তো মূলত ব্যবহার এখন ঢাকা শহরে নেই। আমরা চাচ্ছি যেহেতু এগুলো আমাদের ঐতিহ্যবাহী এবং বিলুপ্তপ্রায় পণ্য তাই এগুলোর ব্যবহার ঢাকা শহরে বাড়ুক। এতে করে দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী পণ্যগুলো বানিয়ে আয় করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২০
এমএএম/এএটি