বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ইন্টারন্যামনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত তৈরি পোশাক শিল্পপণ্যের চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই সারা বছরজুড়ে আমাদের নিজস্ব স্থায়ী প্রদর্শনীকেন্দ্রটি ব্যবহার হোক।
আরও পড়ুন>>>আইসিসিবিতে পোশাকশিল্পের ৪ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু
এসময় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক, মেলার কো অর্গানাইজার এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক নন্দ গোপাল কে ও জাকারিয়া ট্রেড অ্যান্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ভূ্ঁইয়াসহ পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও এসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৫ সালে আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন গার্মেন্ট খাতের সমস্ত কিছু দেশের বাইরে থেকে আসতো। এমন কি কার্টন, বোতাম, সুতা কন্টেইনার ভর্তি করে আসতো। এখন সব আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। আর আজকে বাংলাদেশ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। এটা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। আজকে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ গার্মেন্টশিল্পের সাথে সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন গার্মেন্ট এক্সেসরিজ শিল্প ও গার্মেন্ট শিল্পকে আলাদা করে ভাবার কিছু নেই। আমরা আপনারা সবাই এক ও অভিন্ন।
তিনি বলেন, আমরা বড় ধরেনর রফতানি করি ধরে নিই প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের যদি এক্সেসরিজ না থাকতো, বাইরের দেশ থেকে আনতে হতো তাহলে কিন্তু রফতানি আয় কমে যেতো। এই খাতে প্রায় ৪/৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো অবস্থানে আছি। এখন আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে শ্রীলংকা, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করছি। এখাত থেকে সম্ভবত বিলিয়ন ডলার রফতানি হচ্ছে।
টিপু মুনশি বলেন, দেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য যেসব মেশিনারিজ দেশের বাইরে থেকে আনা হয়, সেসব যেন ডিউটি ফ্রি করা হয়--- এই দাবি জানিয়েছেন বিজিএপিএমইএ’র নেতারা। কারণ সেটাতো দেশে থাকবে না। প্রদর্শনী শেষে আবার চলে যাবে। আমি তাদেরকে বলবো আপনারা একটি আবেদন করেন এবং আগামী বছর থেকে যেন এ ধরনের পণ্য আমদানিতে কোনো রকম ডিউটি না থাকে, আমি সেই চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্প বিশাল অবদান রেখেছে। ৪৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। রফতানি পণ্যের ৮৪ শতাংশ এ খাত থেকেই আসে। এ খাতে বর্তমানে যে সংকট চলছে সেটা সাময়িক। তবে আমাদের টিকে থাকতে হবে। এই টিকে থাকতে সরকার বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে যাচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, গার্মেন্ট খাত ভালো নেই। এটা বলতে ভালো না লাগলেও বলতে হয়। গত ৬ মাসে এ খাত ভালো করেনি। এসময় ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ নেগেটিভ গ্রোথে আছি। সাড়ে ১০ ভাগ কোয়ান্টিটি কমে গেছে। গত ৬ মাসে ৬৯ টা কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ৩২ হাজার ৯শত জন চাকরি হারিয়েছে। একই সঙ্গে ৫৩ টি নতুন কারখানা হয়েছে। আমরা অনেকে না বুঝে এ ব্যবসায় চলে এসেছি ও আসছি।
তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্ট খাত যে ভাবে এগিয়েছে এক্সেসরিজ খাতও সেভাবে এগিয়েছে। গার্মেন্ট না থাকলে এক্সেসরিজও থাকবে না। এজন্য আমাদের আপনাদের বলার অভ্যাস কমাতে হবে। একই সঙ্গে আমরা বিক্ষিপ্তভাবে দাবি জানাই। এ কারনে পিছিয়ে যাই। এজন্য সবাই একসাথে সুপারিশ করলে ফল ভালো পাওয়া যাবে।
রুবানা হক বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য রিসাইক্লিং শিল্পের দিকে যেতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা যেন বড় হই আমিতে যেন ঠেকে না থাকি।
বিজিএপিএমইএ'র আব্দুল কাদের খান বলেন, চলতি বছরের প্রথামার্ধে পোশাকশিল্পের রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৭.৭৪ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশসমূহের পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পোশাকশিল্পের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সুরক্ষার জন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে পোশাকখাত-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি ট্যাক্সফোর্স গঠন, জরুরি। মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা দূরীকরণ, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনে ডলারপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ টাকা বিনিময় হার নির্ধারনের দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের রফতানি সাথে আমাদের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং পণ্যের রফতানি সরাসরি সম্পর্কিত। তাদের রফতানি হ্রাস পেলে আমাদেরও রফতানি হ্রাস পায়। তাই আমাদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে পোশাকশিল্পের মতো আমাদের সেক্টরকেও একই সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক।
বাংলাদেশ সময় : ১৪১৭ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
জিসিজি/জেএম