নীলফামারীর ৬টি উপজেলার মধ্যে অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া উপজেলা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ। আগাম আলুর আবাদ ও ধান, পাট, গম, ভুট্টা আবাদ করা হয় এ উপজেলায়।
২০১৫ সালে পঞ্চগড় চা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনর্বাসিত ভিক্ষুক ও দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জে প্রাথমিকভাবে এক একর জমিতে প্রায় ৭ হাজার চা গাছের চারা রোপণ করা হয়। অল্পদিনের মধ্যে সেই চা চাষে সাফল্য পাওয়ার পর উপজেলা পরিষদের প্রায় পাঁচ একর জমিতে এবং ব্যক্তি মালিকানায় ৩২ বিঘা জমিতে চা চাষ শুরু করা হয়।
এছাড়াও মাগুড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক বিঘা জমি ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের ১৫ শতক জমিতে চায়ের চাষ করা হয়।
এছাড়া সিনহা, নীলসাগর গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ বাণিজ্যিকভাবে চায়ের আবাদ শুরু করে। বর্তমানে সবমিলিয়ে প্রায় ২০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। আর এসব চা বাগানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এলাকার মানুষের।
পূনর্বাসিত ভিক্ষুকরা জানান, আলু ও চা চাষে আমাদের কর্মের সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কাজ করে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ টাকা মেলায় পরিবারে সুখ-শান্তি ফিরে এসেছে। চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে গাছের পরিচর্যার কাজ করছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নর্দান বাংলাদেশ প্রজেক্টের কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত প্রকল্প প্রকৌশলী আবু হেনা ময়নুল ইসলাম জানান, চা চাষের জন্য এই এলাকার মাটি খুবই উপযোগী। পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে তিন বছরে পাতা উত্তোলন শুরু হয়, সেখানে এই এলাকায় দেড় বছরে পাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। চলতি বছরে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নতুন করে আরও এক লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদে সরকারিভাবে চা-নার্সারি তৈরির কাজ চলছে।
এছাড়াও ২০২০ সালের মধ্যে নীলফামারী জেলায় ২৫ হেক্টর জমি চা চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, চা একটি অর্থনৈতিক ফসল। এ অঞ্চলের ভূমি সমতল হওয়ার কারণে চায়ের চাষ কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তুলনামূলকভাবে চা চাষে পরিচর্যা কম এবং আয় বেশি পাশাপাশি রোগ বালাইয়ের আক্রমণও কম হয়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল কালাম আজাদ বলেন, চা চাষের ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৫০ জন ভিক্ষুকের পাশাপাশি শতাধিক অসহায় দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে চা চাষের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে করে এলাকায় ক্ষতিকারক তামাকের আবাদ কমে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০
আরএ