জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও ১২০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হচ্ছে।
এছাড়া জেলার সদর উপজেলায় ৪ হেক্টর, ইন্দুরকানীতে ৮০ হেক্টর, কাউখালীতে ৪ হেক্টর, নাজিরপুরে ১২ হেক্টর, ভান্ডারিয়ায় ১০ হেক্টর, মঠবাড়িয়ায় ৬ হেক্টর ও নেছারাবাদে ৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হচ্ছে। বাঙ্গি ফলকে স্থানীয়ভাবে ফুট বলা হয়। জেলার সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হচ্ছে সদর উপজেলায়। আর সবচেয়ে বেশি বাঙ্গি চাষ হচ্ছে ইন্দুরকানীতে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা (উপপরিচালক) আবু হেনা মোহাম্মাদ জাফর বাংলানিউজকে জানান, জেলায় মোট চাষ করা জমি থেকে চলতি বছরে ২ হাজার ৭০ মেট্রিক টন তরমুজ ফলনের আশা করছি। আর এ সব তরমুজ ১৫ টাকা কেজি দরে স্বাভাবিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চলতি বছরে ওই সব তরমুজ বিক্রি করে ৩ কোটি সাড়ে ১০ লাখ টাকা স্থানীয় তরমুজ চাষিরা পাবেন বলে আশা করছি। এছাড়া ৩ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন বাঙ্গি ফলনের আশা রয়েছে। উৎপাদিত ওই বাঙ্গি বিক্রি করে চাষিরা ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা পাবেন।
তিনি আরও জানান, তরমুজ ও বাঙ্গি চাষিদের চাষ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব রকমের সহযোগিতা করার জন্য জেলার সব উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ রয়েছে। কোনো কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ সহযোগিতা না করার অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলার নাজিরপুরের শেখমাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রাম উপজেলার তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকার তরমুজ দেশের সবচেয়ে সুমিষ্ট তরমুজ হিসেবে পরিচিত। তাই দেশের বাজারে এর চাহিদাও বেশি।
স্থানীয় চাষি জাহাঙ্গীর শেখসহ একাধীক চাষিরা বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি ও বাহির থেকে আসা পাইকারদের সঙ্গে ওই সব প্রভাবশালীদের প্রতারণার কারণে এখানে তরমুজ চাষে বেশ ভাটা পড়েছে।
তিনি আরও জানান, তরমুজ চাষে ঝুঁকি ও আর্থিক সংকটে এ বছর চাষ করতে পারি নাই।
ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর রঘুনাথপুর গ্রামের বাঙ্গিচাষি আব্দুল মান্নান শেখ বাংলানিউজকে জানান, তিনি চলতি বছরে প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। তাতে তার আয় হবে মাত্র ২০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলেও করোনার কারণে বাইরে থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসছেন না। তাছাড়া গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বাঙ্গি ফেটে যাচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা কম। এ সব সমস্যা না হলে ওই জমি থেকে কম হলেও ৪০ হাজার টাকা আসতো। যা থেকে সব খরচের পরও ২৫ হাজার টাকা লাভ পাওয়া যেত।
স্থানীয় তরমুজ ও বাঙ্গি চাষিরা বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস চাষ থেকে বিক্রি পর্যন্ত সকল প্রকার খোঁজ-খবর বা সহযোগিতা করায় আমরা তরমুজ চাষে উৎসাহিত হয়েছি।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীগ বিজয় হাজরা বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় তরমুজ ও বাঙ্গি চাষিদের স্পেশালভাবে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও প্রদর্শনী করা হচ্ছে। তাদের সম্ভব মতো সার, বীজ ও কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করে এ চাষের দিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় তরমুজ ও বাঙ্গি চাষিদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য নির্ধারিতভাবে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু গত ২ বছরের অতিবর্ষণ ও শিলাবৃষ্টির কারণে চাষিরা তরমুজ ও বাঙ্গি চাষে নিরুৎসাহিত হয়ে বিকল্প চাষে ঝুঁকছেন।
জেলার সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হচ্ছে। আর এর সিংহভাগ চাষ হচ্ছে ওই উপজেলার আন্দারমানিক চরে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই চরের প্রায় শত বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হতো। কিন্তু গত বছরে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে তরমুজের ক্ষেত প্লাবিত হলে চাষিরা পড়েন চরম বিপাকে।
স্থানীয় চাষিরা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, ওই চরে ফলানো তরমুজ বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার মগিয়া এলাকায় এনে পাইকারি বিক্রি করতে হয়। আর এ সুযোগে কচুয়ার স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী- চাঁদাবাজদের কারণে অতিষ্ঠ স্থানীয় চাষিরা। এ সব কারণে অনেক জমির মালিক তরমুজ চাষ থেকে সরে গেছেন।
ওই চরের চাষি কবির হোসেন জানান, তিনি এখানে বছর চুক্তিতে নগদ বান্দায় (টাকা হিসাবে) জমি নিয়ে তরমুজ চাষ করছেন। আর এ নগদ বান্দা হিসেবে জমির মালিককে বিঘা প্রতি ৭/৮ হাজার টাকা দেওয়াসহ তরমুজ চাষে শ্রমিক, সার-বীজসহ প্রায় ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ৮০/৮৫ হাজার টাকা আয় হয়। অর্থাৎ বিঘা প্রতি ৪৫/৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। কিন্তু চলতি বছরসহ গত কয়েক বছরে অতিবর্ষণে তরমুজ গাছ মরে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই চাষিরা এর চাষ থেকে অনেকটা সরে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২০
আরএ