মঙ্গলবার (০২ জুন) সকাল ১১টায় আসন্ন ২০২০-২১ জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এবং করণীয় তুলে ধরতে প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা ‘কেমন তামাক কর চাই, বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক ওয়েবিনার আলোচনায় বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারি বুঝিয়ে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরি।
তামাক ব্যবহার বন্ধে প্রচার-প্রচারণার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানান বক্তারা। এছাড়া আরো বলেন, শুধু দাম নয়, সচেতনতাই পারে এর ব্যবহার রোধ করতে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশ মহিলা ধোয়া বিহীন তামাক ব্যবহার করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এটির ব্যবহার বন্ধে সরকারের নজর বাড়াতে হবে বলেও তারা মনে করেন। এক্ষেত্রে সরকারের কর কাঠামো ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে কর বাড়াতে হবে। এতে করে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার কমবে বলে তারা আশা ব্যক্ত করেন।
বর্তমানে সিগারেটের মূল্য স্তর চারটি রয়েছে। এটিকে দুটি স্তরে আনার দাবি করেন বক্তারা।
জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, করোনা আমাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা এ সুযোগে কল্যাণের পথ বেছে নেব। এক্ষেত্রে আমাদের তামাক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, যদি এবারের বাজেটে তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে কোন মৌলিক পরিবর্তন না আসে, এই বাড়তি ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সুযোগ আমরা হারাই। এতো মৃত্যু, অসুস্থতা অব্যাহতই যদি থেকে যায়, তাহলে আমি নৈতিকভাবে এই বাজেটকে সমর্থন করতে পারি না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, ধূমপান কমাতে সিগারেটের স্তর সংখ্যা কমানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের বিদ্যমান চারটি মূল্যস্তর বিলুপ্ত করে দুটি নির্ধারণ করা দরকার। কারণ একাধিক মূল্যস্তর এবং বিভিন্ন দামে সিগারেট ক্রয়ের সুযোগ থাকায় ভোক্তা স্তর পরিবর্তন করার সুযোগ পায়। ফলে তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করেনা। এর পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সংসদ সদস্যদের বিড়ির কর না বাড়ানোর পক্ষে চিঠি দেওয়াকে দু:খজনক উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, তামাকের বিপক্ষে আমাদের শক্তিকে আরো জোরালো করতে হবে। প্রস্তাবিত কর ও দাম পদক্ষেপ সমর্থন করে তিনি বলেন, এবারের বাজেট অধিবেশনে কমপক্ষে ১৫০ সংসদ সদস্যকে এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবো।
বাংলাদেশে মোট তামাক ব্যবহারকারীর অর্ধেকেরও বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহার করলেও এসব তামাকপণ্যের দাম সবচেয়ে সস্তা এবং রাজস্ব আয় খুব কম উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে করারোপের ভিত্তিমূল্য খুব কম, তাই কর বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যও বাড়াতে হবে। এছাড়া তিনি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ লাইসেন্সবিহীন উৎপাদনকারীদের কর জালের আওতায় আনার সুপারিশ করেন। তামাকপণ্যে করারোপ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের সারা বছর ধরেই জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরবেন প্রজ্ঞা’র হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এসএমএকে/জেআইএম