বিশ্বব্যাংক, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও গুগলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিইডব্লিউ রিসার্চ সেন্টার এই পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে রেমিটেন্স আনুমানিক ৫৭৩ ডলারে নেমে আসতে পারে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭১৪ বিলিয়ন ডলার।
রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রধান দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাবে চাকরি হারানোর কারণে বাংলাদেশেও রেমিটেন্স কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে আসার প্রত্যাশা রয়েছে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিটেন্স কমে যাওয়া আমাদের দেশের জনগণ ও অর্থনীতির ওপর একটি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
পিইডব্লিউ’র গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে যে ১০টি দেশের প্রবাসীরা ৬১ শতাংশ রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল করোনার কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় গড়ে ১০ দিন পর পর সেই দেশগুলোর শ্রমিকদের চলাফেরা অনেক বেশি হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ কমেছে ২৯ শতাংশ, সৌদি আরবে ৩২ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৪১ শতাংশ, কানাডায় ৩৬ শতাংশ, জার্মানিতে ২৫ শতাংশ, ফ্রান্সে ৪৩ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ শতাংশ এবং ইতালিতে ৪৫ শতাংশ কাজ কমে গেছে।
পিইডব্লিউ’র ওই প্রতিবেদনে রাশিয়ায় কাজ কমে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করা না হলেও দেশটিতে কাজ বন্ধ রয়েছে ৮২ দিন ধরে। রেমিটেন্স প্রেরণকারী শীর্ষ দেশগুলো গত ২৮ মে পর্যন্ত কর্মক্ষেত্র বন্ধ রাখে অথবা বাসায় অবস্থান করার নির্দেশ দেয়। রেমিটেন্স প্রেরণকারী বিশ্বের ১৫৪টি দেশে গড়ে ৫৭ দিন কর্মক্ষেত্র বন্ধ ছিল।
ফলে কর্মক্ষেত্রে চলাফেরাও কমেছে শীর্ষ ১০টি দেশের। এসব দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মে পর্যন্ত কর্মস্থলে যাওয়া কমেছে গড়ে ৩৩ শতাংশ। অপরদিকে ১১৬টি দেশে কমেছে গড়ে ২৬ শতাংশ।
করোনার কারণে ২২২ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক অভিবাসীর মধ্যে অনেকেই চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার কারণে অর্থ পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানোর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার ও ইতালি।
বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশে রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে আরও একটি অন্যতম উৎস হচ্ছে ১০ মিলিয়ন মানুষের তৈরি পোশাক খাত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের দুই দিন বাকি থাকতেই রেমিটেন্স ১৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৭ বিলিয় ডলার।
মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার বাংলদেশি চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার আগে বাংলাদেশে অনেক ভালো রেমিটেন্স এসেছে।
সাম্প্রতিককালে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফিরে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের উচিত যে সব দেশ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যাতে আর কোনো শ্রমিককে তারা ফেরত না পাঠায়।
ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, সরকারের উচিত দেশে ফিরে আসা শ্রমিকদের নিজ নিজ অভিজ্ঞ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো। এতে সামগ্রিক উৎপাদন, রপ্তানি ও ঘাটতি দূর হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসী ও শরণার্থী গবেষণা কেন্দ্র বলেছে, বিশ্বের অনেক দেশ কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই জোর করে শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
শরণার্থী ও অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর নির্বাহী পরিচালক সিআর আবরার বলেন, বিদেশে শ্রমিকদের কোনো নোটিশ ছাড়া দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
রেমিটেন্স গ্রহণকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ১১তম বাংলাদেশ। শীর্ষ দশে থাকা দেশগুলো হলো- ভারত, চীন, মেক্সিকো, ফিলিপাইন্স, মিশর, ফ্রান্স, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, জার্মানি ও ভিয়েতনাম।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ২০০৯ সালে রেমিটেন্স কমেছিল ৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে ১ শতাংশ কমেছে বিশ্বের অনেক দেশের দুর্বল প্রবৃদ্ধি ও তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২০
এসই/এমজেএফ