১৯৬৯ সালে নুরুন্নাহার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বের হয়ে গেলেও পারিবারিক কারণে সেসময় অনার্স শেষ করতে পারেনি ঝর্ণা। তখন দু’জনের মধ্যে কম যোগাযোগ হতো।
অন্যদিকে নুরুন্নাহার বিএফ শাহীন কলেজে শিক্ষকতার পর ছিলেন বিএড কলেজের ডেপুটি ডিরেক্টর। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্ব এখনো অটুট রেখেছেন তারা। ইচ্ছা থাকলেও আগের মতো সময় নিয়ে গল্প করা হয়ে ওঠে না।
শনিবার (৯ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশান সেই সুযোগ করে দেয়। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত মিলনমেলায় দিয়েছেন প্রাণভরে আড্ডা। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বন্ধুত্ব ধরে রাখার কৃতিত্ব দিচ্ছেন একে অপরকে। বলছিলেন, এখনো সুখে দুঃখে দু’জনেই পাশে থাকার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি স্ট্রোক করে ঝর্ণার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুরনো বন্ধুদের খোঁজ পাওয়ার উৎসবে এসেও তাদের কন্ঠে আক্ষেপও ঝরে পড়লো। দু’জনে তাদের ব্যাচের বন্ধুদের খুঁজে বেড়ালেও দেখা পাননি কারো। ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, তখনকার সময়ে অনেক বেশি আন্তরিকতা ছিলো। যেটা এখন পান না সেভাবে। মিলনমেলায় কথা হয় ১৯৭৭-৭৮ সেশনের আইন বিভাগের ছাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোশাররফ হোসেন মজুমদার সঙ্গে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের সরওয়ার হোসেন খানের সঙ্গে বিশাল অনুষ্ঠানস্থলের পূর্ব পাশে বসে কথা বলছিলেন। একইসময়ের না হলেও দু’জনেই ছিলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের। সে কারণে সম্পর্কের গাঁথুনিটা বেশ মজবুত হলের বড় ভাই-ছোট ভাই হিসেবে। দু’জনেই পরিবার নিয়ে পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। নিজ বিভাগের ও হলের অনেকের দেখা পেয়েছেন।
ক্যাম্পাসের সোনালী সময়ের কথা বলতে গিয়ে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মজুমদার বলছিলেন ক্লাসে ব্রেইল পদ্ধতিতে নোট করার কথা। স্যারের মুখ থেকে শোনে শোনে ক্লাসেই নোট করা শেষ করতেন। অনার্স ও মাস্টার্সে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়া এ শিক্ষার্থীর নোট দেখে অন্যরা মিলিয়ে নিতেন। তিনি বলেন, সবাই আমাকে সহযোগিতা করতো। সেই বন্ধুদের ও শ্রুতি লেখকদের অনেক মিস করি।
‘শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত মিলনমেলা উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয় মনোরম সাজে। প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বয়স, পদ ও সামাজিক অবস্থান ভুলে তারা হারিয়ে যান নিজেদের যৌবনে। ক্যাম্পাসের ফেলে আসা সেই রঙিন জীবনকে খুঁজে ফেরেন তারা। গল্প দেওয়ার জন্য দশকভিত্তিক করা মঞ্চে টিএসসির আড্ডা, দুরন্তপনা অথবা আন্দোলন-সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলো তাদের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। দিনভর আনন্দ-উল্লাস, ছবি তোলা, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, হৈ চৈ ও কোলাহলে মেতে থাকে সবাই।
সকালে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে মিলনমেলার উদ্বোধন করেন। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৯
এসকেবি/আরবি/