রাকসু নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, প্রথম দিকে রাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন তোড়জোড় দেখালেও ক্রমেই তা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি তোলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলে প্রচার-প্রচারণা। এরপর গত ২০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট রাকসু সংলাপ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ২২ জানুয়ারি সংলাপের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্র, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের তালিকা আহ্বান করে সংলাপ কমিটি। এতে সংলাপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন তাদের গঠনতন্ত্র জমা দেয়।
এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রাকসু সংলাপ কমিটির কার্যক্রম। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংঠনের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের বিভিন্ন দাবির যৌক্তিকতা সংলাপ কমিটির কাছে তুলে ধরেন। সংলাপ কমিটিও সংগঠনগুলোর দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে সংলাপে বসা সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এরপর আগামী ১৬ এপ্রিল দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে বসবে প্রশাসন।
এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সংলাপে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি রাজনৈতিক ও ২টি স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র সংগঠন যে দাবি জানিয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কিছু কিছু দাবির ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সংগঠনগুলো প্রায় একই দাবি জানিয়েছে। বিশেষ করে হলের বাইরে ভোট কেন্দ্রের দাবির বিষয়ে ব্যতিক্রম কেবল ছাত্রলীগই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র জোটের আহ্বায়ক রঞ্জু হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের তারিখ হওয়ার পর আমরা আশাবাদী ছিলাম, প্রশাসনও সেসময় ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করে দেয়। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে না নিয়ে নিজের মতো করে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে প্রশাসন। নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে একটি নির্বাচনী পরিবেশ থাকা দরকার কিন্তু প্রশাসন সেই পরিবেশ এখানো তৈরি করেনি। যার ফলে শুরুর দিকে আমরা যতটুকু আশাবাদী ছিলাম এখন তার চেয়ে বেশি আশাহত।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, রাকসু নির্বাচন আমাদের প্রাণের দাবি। কিন্তু প্রশাসন এটি নিয়ে অনেক নাটকীয়তা শুরু করেছে। কবে নাগাদ রাকসু নির্বাচন হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু বলেছে না। ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করে ও রাজনৈতিক সব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে দ্রুত রাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি আমরা বারবার জানালেও রাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রশাসন যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাতে মনে হয়, এ বছর রাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়।
রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের অনুষ্ঠিত সংলাপে দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা আবারও তাদের সঙ্গে বসবো ও দ্রুত রাকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানাবো।
জানতে চাইলে রাকসু সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যপক লুৎফর রহমান বলেন, ১২টি সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে বসা হয়েছে আর তিনটি সংগঠন বাকি আছে। তাদের সঙ্গে বসার পর হল প্রশাসনের সঙ্গে বসা হবে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও সহাবস্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে আমরা রাকসু নির্বাচন দেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
এমজেএফ