জানা গেছে, শুধু প্রভোস্টই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস দু’টিতে নির্ধারিত আবাসিক শিক্ষক মাঝে মধ্যে থাকলেও ছাত্রী হোস্টেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা ছাড়া আর কেউই থাকেন না। এতে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল ফোনেই যোগাযোগ রাখতে হয় প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
তবে প্রভোস্টরা বলছেন, যেখানেই থাকেন না কেন, নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা শতভাগ দায়িত্ব পালন করছেন। আর যা কিছুই হোক না কেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পাসে অল্প সময়ের মধ্যেই চলে আসেন। যদিও, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয় তাদের জন্য।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য একমাত্র হোস্টেল শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রী হোস্টেলে এ অব্দি বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বর্তমান সময়ে প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের কেউই থাকেন না। কিন্তু, তাদের থাকার জন্য ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। আর শিক্ষকেরা না থাকায় মধ্যরাতে বা যেকোনো সময় যদি হোস্টেলে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যেতে হয় অভিভাবকহীন সহপাঠীদেরই। তখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও কিছু করার থাকে না। আবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একজন নারী চিকিৎসক রয়েছেন, তাকেও নিয়মিত পাওয়া যায় না।
এ হলের শিক্ষার্থীরা জানান, পাঁচতলা হোস্টেলের চারদিকে সীমানা প্রাচীর যথেষ্ট নয়, ফলে দিনের বেলাতেই ঘটছে চুরির ঘটনা। কিছুদিন আগেই হোস্টেলের তৃতীয় তলা থেকে শিক্ষার্থীদের মোবাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি হয়েছে। পুরো হলের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র দু’জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এতে এত বড় হোস্টেল পরিষ্কার রাখাই দায় হয়ে পড়েছে। আবার, যেখানে রাতের বেলা হোস্টেলের ভেতরে নারী নিরাপত্তাকর্মী থাকার কথা, সেখানে ভেতরের গেটে থাকছেন পুরুষ আর বাইরের গেটের দায়িত্বে নারী দিয়ে রাখা হচ্ছে।
ছাত্রদের দু’টি হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, এ হলে শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আবাসিকের শিক্ষার্থী নন, এমন ছাত্ররাও এসে মারামারিতে অংশ নিয়েছেন। সবশেষ মাস খানেক আগে এ হলের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র রাজু গাজীকে মারধর করা হয়। এর আগে, হলের ভেতরেই মারধরের শিকার হন শিক্ষার্থী রাজীব মণ্ডলসহ আরও একজন।
শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এ হলেই কয়েক মাস আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন লোকমান হোসেন নামে এক ছাত্র। এছাড়া, শেরেবাংলা হলে না থাকলেও ওই হলের নিচতলার ১০০১ নাম্বার কক্ষটি অবৈধভাবে দখল করে রয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। মূলত, এ কক্ষটি নাট্যকলার শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হয়েছিল।
এসব ছাড়াও, উভয় হোস্টেলেই বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ছাত্রদের।
তারা জানান, আবাসিক শিক্ষকদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হলে তাদের কেউই নেই। শেরেবাংলা হলে আবাসিক শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়াসিফ আহমদ ফয়সল থাকছেন নিয়মিত। যদিও, তিনি বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। এ হলে কাগজে কলমে সহকারী আবাসিক শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের থাকার কথা থাকলে তারা বাবা অসুস্থ থাকায় তিনি থাকছেন না।
তবে, অন্যদের চেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই ভালো রয়েছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু হলে প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি হলের নিচতলায় প্রভোস্টের অফিস কক্ষে আবাসিক শিক্ষকেরা জায়গা ভাগাভাগি করে থাকছেন। সব শিক্ষার্থী হয়তো বিষয়টি খেয়াল করতে পারেনি। যেমন, বর্তমানে সহকারি আবাসিক শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু হলে থাকছেন।
তিনি বলেন, কোনো হলের জন্যই প্রভোস্ট বা আবাসিক শিক্ষকদের আলাদা আবাসন ব্যবস্থা ক্যাম্পাসের ভেতরে নেই। তাই, বাধ্য হয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাইরে থাকতে হচ্ছে। আবাসন ব্যবস্থা হলে এ সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি।
এর আগে, মাদক ও চুরির দু’টি বিষয়ে জানার পরপরই সমাধানে নেমে পড়েন জানিয়ে রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, হোস্টেলে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসি ও সমস্যা সমাধানে কাজ করি। এর জন্য রাত বা দিনের হিসাব করা হয় না।
এদিকে, শেখ হাসিনা হলে কাগজে-কলমে প্রভোস্ট চিন্ময়ী পোদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, আবাসন সংকটের কারণে প্রভোস্টরা হোস্টেলে থাকতে পারেন না। আর আবাসিক শিক্ষকদের জন্য হলের ভেতর সামান্য ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা যাবে না। কারণ, এটি ছাত্রী হোস্টেল। তবে, ছাত্রীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে আবাসিক শিক্ষকেরা সচেষ্ট রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করেছে অল্প কিছু দিন হয়েছে। এখনো অনেক প্রকল্প চলমান। উপাচার্য-প্রক্টর-প্রভোস্টদের থাকার জন্য আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। আর যা-ও বা তৈরি হয়েছে, সেখানে এখনো অ্যালোটমেন্ট (বরাদ্দ) দেওয়া হয়নি। তবে, আবাসন ব্যবস্থা হলে অবশ্যই প্রক্টর-প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে থাকবেন। এর আগ পর্যন্ত হোস্টেলগুলোতে প্রতিমুহূর্তের খোঁজ-খবর রাখছেন তারা। যেকোনো সমস্যা সমাধান অল্প সময়েই করা হচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকেরা বলছেন, শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়, হোস্টেলে আবাসিক শিক্ষকেরা নিয়মিত থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাতেও আগ্রহী হবেন। পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে তারা সহায়তাও পাবেন। তাই, আবাসিক শিক্ষকদের হোস্টলে থাকা জরুরি।
জানা যায়, শেখ হাসিনা হলে কাগজে-কলমে প্রভোষ্টের দায়িত্বে রয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিলআফরোজ খানম, হাউজ টিউটর বা আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন চিন্ময়ী পোদ্দার, সুমি রানী সাহা, খাদিজা আক্তার, সহকারী হাউজ টিউটর ইশরাত জাহান সঞ্চারী, মার্জিয়া নমি, নাহিদা সুলতানা, তাসমিন জাহান, সেকশন অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন চিত্রা দেবী মণ্ডল। তবে, দিলআফরোজ খানম দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকায় প্রভোষ্টের দায়িত্ব পালন করছেন চিন্ময়ী পোদ্দার।
বঙ্গবন্ধু হলে প্রভোষ্টের দায়িত্বে রয়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল, আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন সমীরণ রায়, মো. মাসুম সিকদার, এটিএম রফিকুল ইসলাম, ড. মো. নাজমুল কায়েস, সহকারী আবাসিক শিক্ষক মাহামুদুল হাসান সোহাগ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. ইমরান হোসেন, মোর্শেদ আহমেদ অভি ও সেকশন অফিসার মো. হুমায়ুন কবির।
শেরেবাংলা হলে প্রভোস্টের দায়িত্বে রয়েছেন অর্থ ও ব্যাংকিং বিভাগ সহকারী অধ্যাপক মো. ইব্রাহীম মোল্লা, আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন ইয়াসিফ আহমদ ফয়সল, সহকারী হাউজ টিউটর অপূর্ব রায়, সেকশন অফিসার হাবিবুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম তালুকদার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এমএস/একে