শনিবার (১৬ নভেম্বর) ছিল পঞ্চম আসরের সমাপনী দিন। এ দিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরুতে মঞ্চে ওঠেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান কাওয়ালি গানের শিল্পী মালেক কাওয়াল।
আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের সুরের ইন্দ্রজালে ভাসাতে মালেক কাওয়াল তার পরিবেশনা শুরু করেন সুফি ঘরানার ‘ইশকে নবী ক্যায়া’ গান দিয়ে। গানটি কণ্ঠে তোলার পরপরই পেতে থাকেন উপস্থিতির করতালি আর বাহবা। এরপর তিনি একে একে গেয়ে শোনান ‘হজরতে ইসমে-আজম’, ‘ইয়া আলী’, ‘নূর-এ-মোহাম্মদ হাবীব আল্লাহ’, ‘বাবা মওলানা’, ‘এই ভুবনে নেই তোমার তুলনা’, ‘খাজা পিয়া হে দিল্লিতে হে খাজা পিয়া’র মতো অসাধারণ সব গান।
তার পরিবেশনা শেষে মঞ্চে ওঠে রাশিয়ার লোকগানের দল ‘সাত্তুমা’। আধুনিক লোক ঘরানার ফিউসন গান দিয়ে দর্শক নজর কাড়ে ব্যান্ডটি। বিশেষ করে ব্যান্ডটির ইন্সট্রুমেন্টাল ছিল এককথায় অসাধারণ। ম্যান্ডোলিন, বাঁশি, ভায়োলিনের যথাযথ সংমিশ্রণে প্রসিদ্ধ রুশ লোকসংগীতের সমৃদ্ধ সুধা ও মাদকতা ছড়িয়ে দেয় কারেলিমা অঞ্চলের জনপ্রিয় এই ব্যান্ডদল।
রাশিয়ার জনপ্রিয় এই ব্যান্ডদলেন মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন বাংলার অন্যতম লোকসংগীত শিল্পী চন্দনা মজুমদার। মঞ্চে এসেই তিনি গাইলেন সাধক লালন সাঁইজির ‘জগত মুক্তিতে ভোলালেন সাঁই’।
আয়োজনের শেষ রাত হওয়ায় মাঠে দর্শক অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই। সেই দর্শকেরও যেন লালনের এই গানের প্রতিটি কলিই জানা! শিল্পীর সঙ্গে সমস্বরে গেয়ে বাংলার লোকসংগীতের এই সাধককে স্বাগত জানান তারা। এরপর তিনি গান আরেকটি লালন সংগীত ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’।
গীতিকবি বিজয় সরকারের ‘তুমি জানো নারে প্রিয়’ গানটি চন্দনা মজুমদার কণ্ঠে তুলতেই সুর জাগে স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণে। এরপরে তিনি শোনান ফকির কালা শাহর ‘লোহারে বানাইল কাঞ্চা সোনা’। এর আগে চন্দনা মজুমদার পরিবেশন করেন লালনসংগীত ‘ সে কী চেনে মানুষ রতন’। আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারির সব দর্শকই তখন কণ্ঠ মেলান এ গানে।
শেষে তিনি শোনান ‘মনপুরা’ সিনেমার ‘যাও পাখি বলো তারে’। এই গানের পরিবেশনা শেষে তিনি বলেন, বাংলার আসল লোকজ যে গান, আপনারা সে গান শুনবেন। এমনটাই প্রত্যাশা।
উৎসবের শেষ পরিবেশনা পাকিস্তানের সুফি ঘরানার ব্যান্ড জুনুনের। ১৯৯৭ এর চতুর্থ অ্যালবাম ‘আজাদি’র ‘সাইওনি’ দিয়ে উপমহাদেশের শ্রোতাদের মন জয় করে নেয় ব্যান্ডটি। ব্যান্ডের লিড ভোকাল আলী আজমত ঢাকার মঞ্চে বাংলার লোকসংগীত সাধকদের সঙ্গে পারফর্ম করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, চমৎকার মানুষ আপনারা! এখানে আসতে পেরে সত্যিই অন্যরকম লাগছে। লোকগানের প্রতি আপনাদের এতটা নিবেদন, সত্যিই ভালো লাগছে অনেক। এই মঞ্চে গাইতে পারাও সৌভাগ্যের ব্যাপার। আপনারা সম্মান জানবেন আমার।
এই ব্যান্ডটি শোনায় বলিউডি সিনেমা ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’র ‘তু হি হ্যায়’ গানটি। এরপর তারা শোনায় ‘ইয়ে দিল হ্যায় তোমহারা’। দুটি গানের পর তারা শোনায় তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘সাইওনি’ গানটি। ১৯৯৭ সালে নিজেদের চতুর্থ অ্যালবাম ‘আজাদি’-র প্রথম ট্র্যাক ছিল গানটি। এই এক গানেই উপমহাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় পাকিস্তানের ফোক গানের এই ব্যান্ডদল।
ব্যান্ড দলটির পারফর্মের মধ্য দিয়েই রাতে পর্দা নামে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসরের। এ আসরে এবার পারফর্ম করেন জর্জিয়ার লোকগানের দল ‘শেভেনেবুরেবি, বাংলাদেশের বাউল শিল্পী শাহ আলম সরকার, ভারতীয় সংগীতশিল্পী দালের মেহেন্দি। ছিলেন বাংলাদেশের লোকশিল্পী কাজল দেওয়ান, ফকির শাহাবুদ্দিন, ম্যাজিক বাউলিয়ানার কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম, মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা এবং পাকিস্তানের সুফি গায়িকা হিনা নাসরুল্লাহ্।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর)। ওইদিন উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সমাপনী দিনে দর্শক উপস্থিতি ছিল এককথায় চোখ ধাঁধানো।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
ওএফবি/টিএ