কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- বিশ্বের সর্বত্রই মেলে এমন এই পোষা পাখীটি আদতে বেশ বুদ্ধিমান। আর এতটাই অাবেগানুভূতিপ্রবণ যে নিজের তো বটেই পালের সঙ্গীদেরও কল্যাণে বেশ কাজে লাগে।
বিশ্বজুড়ে গণনায় মুরগির সংখ্যা এখন ১৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯০০ কোটি। যার মানে হচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহে একক প্রাণী হিসাবে মুরগিরা বিপুল সংখ্যকের দলে। তারপরেও এই মুরগি সম্পর্কে অনেকেরেই নেই সামান্য ধারনাটুকু ।
ফলে অনেকেই মুরগি নিয়ে প্রচলিত ধারনাভিত্তিক কিছু একটা ভেবে বসে থাকেন। কিছু কিছু গবেষণা বলছে, অনেকেতো মুরগিকে পাখী হিসেবেই মেনে নিতে রাজি নন।
মুরগি মূলত পক্ষীকূলের গ্যালিফর্মস জাতের একটি প্রজাতি। টার্কি, তিতির এগুলোও একই জাতির অন্তর্ভূক্ত।
অনেকেই ভাবেন মুরগি নির্বোধ প্রাণি। জটিলবুদ্ধির কিছুই ওদের মাথায় ধরে না, যেমনটা দেখা যায় বানর কিংবা শিম্পাঞ্জির বেলায়। এই মনোভাব থেকেই জনসংস্কৃতিতে মুরগি নিয়ে কিছু কিছু সাধারণ ধারনা তৈরি হয়েছে। তার অন্যতম হচ্ছে- মুরগি কেবল ডিম দেবে আর মাংস দেবে। খোয়াড়ে পালন হবে। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা হবে সেই বাচ্চা বড় হয়ে ডিম দেবে। তাতে বাচ্চা হবে। এক পর্যায়ে খাওয়া হবে জবাই করে। এটাই মুরগির জীবন চক্র।
সে যাই হোক না কেনো! আজ বলার সময় এসেছে মুরগি কোনও হাবাগোবা প্রাণি নয়!
ওরা গুনতে জানে। কিছুটা আত্মসচেতনতা বোধও রয়েছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে একের অপরের ওপর বড়ত্ব খাটায়। মেকিয়াভেলীয় পন্থায় তারা কর্তৃত্ব জাহির করে। আসলে মুরগিরা এতটাই স্মার্ট যে ওরাই ওদের নিয়ে পূর্বধারণা ভেঙ্গে দিতে পারে।
২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার অংশ হিসেবে লিজেল ও’ডয়ার ও তার সহকর্মীরা অস্ট্রেলিয়ার এডেলেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাজুয়েশনের একটি ক্লাসে কথা বলেন। এই ক্লাসে শিক্ষার্থীরা মুরগির মনস্তত্ব ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালান। ক্লাস শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের একটি প্রশ্নপত্র পূরণের জন্য বলা হয়। তাতে অধিকাংশরই মত ছিলো, তারা এর আগে মুরগি নিয়ে খুব কমই ভেবেছেন, কম সময় কাটিয়েছেন। তারা মুরগিকে অতি সাধারণ একটি প্রাণি হিসেবে দেখেছেন, ওদের নিয়ে বিরক্ত হতাশ কিংবা খুশি কোনওটিই নন তারা।
কিন্তু এরপর মাত্র দুই ঘণ্টার প্রশিক্ষণেই মুরগি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মনোভাব গেলো পাল্টে। এক শিক্ষার্থী বললেন, যেমনটা ভাবা হয় মুরগি তার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট। আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমি কখনো ভাবিনি মুরগিরা এত দ্রুত শিখতে পারে।
এরপর ও’ডয়ার করলেন কি, ঠিক একই ধরনের একটা জরিপ চালালেন মুরগি খামারের কর্মীদের মাঝে। যার ফলাফল পুরোই এক।
দুটি ভিন্ন সামাজিক অবস্থানের মানুষের সঙ্গে কাজ করে একই ধরনের ফল পাওয়ার পর ও’ডয়ার এখন পরিকল্পনা করছেন, একটু যাচাই করে দেখবেন এই অভিজ্ঞতার পর মানুষের মুরগি খাওয়ার অভ্যাসে কোনও পরিবর্তন আসে কি না। তিনি আসলে দেখতে চান, মানুষ মুরগি খাওয়া বন্ধ করে ওগুলো প্রতিপালনেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে কি না। আর তা যদি হয়, সেটাই হবে নৈতিকভাবে অধিক গ্রহণযোগ্য।
ও’ডয়ারের এই গবেষণালব্দ ফলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহর কিমেলা সেন্টার ফর এনিমেল অ্যাডভোকেসির লরি মেরিনোর মুরগির মনোভাবের বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা শীর্ষক গবেষণাপত্রের মিল রয়েছে। ফার্ম স্যাঙ্কচুয়ারি ও দ্য কিমেলা সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণা সম্পন্ন হয় যার মূল লক্ষই ছিলো খামারে পালিত প্রাণি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা।
ম্যারিনো বলেন, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপাত্ত স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছে, মানুষ যেমনটা ভাবে, মুরগি তেমন কোনও অসচেতন কিংবা নির্বোধ প্রাণি নয়।