দক্ষিণ ভারতীয় রামানুজ সম্প্রদায়ের অনুগামী এই বৈষ্ণবীয় আখড়াটি বিগত তিন শতাব্দী ধরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষেরই সেবা করে আসছে। মীর জাফর আলী খাঁর সময়ে লছমন দাস এটি তৈরি করেন।
মীর জাফরের পরে বাংলার মসনদে বসেন মীর কাসিম। মীর কাসিম মহন্ত মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজকার্জ সম্পর্কে তার পরামর্শ ও উপদেশ নেন। মীর কাসিম তাকে অনেক ধনরত্ন উপহার দিতে চাইলেন। কিন্তু মহন্ত তা গ্রহণ করলেন না। মহন্ত তাকে বললেন, ‘শ্রীঘ্রই বঙ্গে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইবে; সেই সময় এই অর্থ দ্বারা যাহাতে দীন-দরিদ্রদের উপকার হয় তাহার ব্যবস্থা কর’। এর কিছু দিন পরেই বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিল, যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। মীর কাসিম মহন্তের উপদেশ মতো মানুষের জন্য তার ধন-ভাণ্ডার অর্পণ করলেন। এই মহন্ত লছমন দাস মীর কাসিমকে মীর জাফরের ব্যাপারেও সতর্ক করেছিলেন। মীর জাফরের ভয়ে মীর কাসিম অল্প কিছু দিনের জন্য তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ মুঙ্গেরে স্থানান্তর করেন। তিনি প্রজাসাধানের ওপর থেকে করের বোঝা কমিয়ে দিলেন। কিন্তু মীর জাফরের সহায়তায় প্রথমে মুঙ্গের ও পরে পাটনা ইংরেজরা দখল করে নিল। মীর কাসিমের মতো মীর জাফরও লছমন দাসের উপদেশ-পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। এভাবে লছমন দাস সে সময়ের নবাবদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন।
সময়ের ব্যবধানে আজ লছমন দাস, মীর জাফর বা মীর কাসিম ও নেই। কিন্তু এ প্রাসাদ ও সেবা কেন্দ্রটি আছে। এখানে আশ্রম ও ভক্তদের আনা গোনা লেগে থাকে। ভ্ক্তদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে সব সময়ই।
এর অভ্যন্তরে আছে প্রাচীন কাষ্ঠ শিল্পে খোদিত এবং রাজস্থানের তুষারশুভ্র মর্মরে শতাধিক বছরের প্রাচীন প্রাসাদ। বয়সের ভারে প্রাসাদটি আজ জরাজীর্ণ অবস্থা। এটি বন্ধই থাকে। পাশের ভবনে আছে ঐতিহ্যবাহী সোনার রথ, বেলোয়ারী ঝাড়, ঐতিহ্যময় আসবাবপত্র, প্রাচীন যুগের বেবি অস্টিন মোটর যান, পুরনো রান্না সরঞ্জাম ইত্যাদি। কথিত আছে, প্রাচীন যুগের এই বেবি অস্টিন গাড়িটি আশি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল, যা আজ ছোট একটি গ্যারেজে রাখা আছে। পাশেই আছে সোনার রথ। দর্শনার্থীদের জন্য দিনের সব সময়ই এটি খোলা থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ
** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা
** ৪র্থ পর্ব: চার ভাইয়ের বাগান বিলাস ও একটি গুপ্তপথ
** ৫ম পর্ব: জগৎশেঠকে সপরিবারে হত্যা করা হয় যে প্রাসাদে
** ৬ষ্ঠ পর্ব: নুরলদীনের ‘জাগো বাহে’ শোনা যায় নসীপুর প্রাসাদে
** ৭ম পর্ব: কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম
** ৮ম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর কলিজাখেকো মেয়ের সমাধি!
** ৯ম পর্ব: হেস্টিংসের স্ত্রী, মেয়ের সমাধি ও একটি আর্মেনিয়ান চার্চ
** ১০ম পর্ব: মুজিবনগর ও পলাশী: বাংলার ইতিহাসের দুই আম্রকানন
** ১১তম পর্ব: ৩শ বছরের ডাচ সিমেট্রি ও যোগেন্দ্র নারায়ণের মন্দির
** ১২তম পর্ব: সতীদাহ ঘাটের পাতালেশ্বর মন্দির