ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পর্ব ২১

বৈচিত্র্যময় মুর্শিদাবাদের খাবার 

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
বৈচিত্র্যময় মুর্শিদাবাদের খাবার  মুর্শিদাবাদের পথে পথে

মুর্শিদাবাদ ঘুরে: মুর্শিদাবাদ বাংলাদেশের আর দশটা জেলার মতোই অতি সাদামাটা ছিমছাম একটি শহর। নবাবি আমলের জৌলুস আজ নেই। নেই সেই চাকচিক্য আর নবাবি মেজাজ।

কিন্তু বাঙালি বলে কথা! তার আর যাই থাকুক না থাকুক, পাতে ভালো-মন্দ না জুটলে মেজাজ তিরিক্ষি অবস্থা। নবাবি মেজাজ বলে কথা।

তাই বাড়িতে তার বৈঠকখানা থাকুক আর না থাকুক, রন্ধনশালায় তার নবাবি চাল ঠিকই আছে।  

মুর্শিদাবাদের খাবার

মুর্শিদাবাদের নবাবি আজ আর নেই। কিন্তু খাবারের বাঙালিয়ানা ও নবাবি চালের প্রয়োগ হয়েছে মুর্শিদাবাদের খাবারে। এখানে খাবারে যেমন বাঙালিয়ানার প্রকাশ হয়েছে তেমনি তার পরিবেশনায় আছে নবাবি ঢং। সেই সঙ্গে ভারতীয় স্বাদ তো বহালই আছে। সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদের খাবার স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জল। বাংলা, নবাবি ও ভারতীয় খাবারের এক চমৎকার সংমিশ্রণ হয়েছে মুর্শিদাবাদের খাবারে।

মোগলাই খাবার পুরো ভারতবর্ষেই জনপ্রিয়। মুঘল বা সুবেহ আমলের বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যা তথা পুরো ভারতবর্ষেই মোগলাই খাবার জনপ্রিয় হয়েছে। মুঘলরা চলে গেছে, রাজা-বাদশা-নবাবরাও চলে গেছেন। কিন্তু সব চলে গেলেও কিছু না কিছু রয়েই যায়। তাই বাঙালিরা মোগলাই ও নবাবি খাবারকে আজও ধরে রেখেছে। জিহ্বায় একবার কোনো স্বাদ লেগে গেলে তা থেকে বাঙালির আর মুক্তি নেই। আমরা বাঙালি-খেতেও পারি, খাওয়াতেও পারি। আতিথেয়তার ব্যাপারে বাঙালিদের কদর বিশ্বব্যাপী। তবে সেই বাঙালিরা আজ শুধু বাংলাদেশেই বাস করে।  

মুর্শিদাবাদের খাবার

দক্ষিণভারতে রয়েছে তাদের নিজস্ব খাবারের সংস্কৃতি। তবে তার ভেতরেও খাবারের মেন্যুতে ঠিকই রয়ে গেছে মোগলাই খাবার। এছাড়া পাঞ্জাব ও অন্যান্য প্রদেশেও খাবারের বৈচিত্র্য রয়েছে। তবে সব প্রদেশেই ট্র্যাডিশনাল খাবারই বেশি চলে।  

মুর্শিদাবাদের বাঙালি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কাচ্ছি ও চিকেন বিয়িরানি। বিফ বিরিয়ানিও চলে মন্দ নয়। খাবারের দামও বেশি নয়। খুব ভালো মানের হোটেলেও সর্বোচ্চ ২০০ টাকার মধ্যেই মিলবে যেকোনো ধরনের বিরিয়ানি।  

মুর্শিদাবাদের খাবার

অন্যান্য চিকেন ও মাটন আইটেমের মধ্যে রয়েছে চিকেন কারি, চিকেন কাছা, চিকেন বাটার মাসালা, চিকেন দো পেঁয়াজা, কাশ্মিরী চিকেন ইত্যাদি। এর প্রত্যেকটি মেন্যুই অত্যন্ত সুস্বাদু। এগুলো সব নন-ভেজ আইটেম।

মুর্শিদাবাদের খাবার
 
ভেজ আইটেমগুলোও অত্যন্ত মজাদার। ভেজিটেবল তরকা ও ডাল পনির সঙ্গে আলু পরাটার মজাই অন্যরকম। খাবারের সঙ্গে চাটনি সেই স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।  

পরাটার মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য। প্রচলিত পরাটার পাশাপাশি এখানে রয়েছে লাচ্ছা পরাটা ও মেথি পরাটা। মেথি পরাটা দেখতে খুব ভালো না হলেও স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা। সহযোগী আইটেম টেবিলে হাজির হওয়ার আগেই দুই-চারটি মেথি পরাটা খাওয়া হয়ে যায়। হোটেলের ওয়েটাররাও মনে হলো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তাই মাংস ডালের সঙ্গে আর দু’টো মেথি পরাটা নিয়েই হাজির হলো।  

মুর্শিদাবাদের খাবার

পুরো ভারতেই ডাল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানেও তার ভিন্নতা নেই। তবে দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতে ডালের চেয়ে এখানকার ডালই একটু বেশি স্বাদের মনো হলো। ডালের উপরে পেয়াজ ভাঁজা ছিটিয়ে দেওয়ার ফলে দেখতেও যেমন খেতেও তেমন।  

মুর্শিদাবাদের খাবার

ভালো হোটেল বলতে বহরমপুরে যা কয়েকটি রয়েছে। তবে পর্যটন গন্তব্য লালবাগ হওয়ায় সেখানকার হোটেলগুলোতেই খাবার খেতে হয়। লালবাগের ভালো হোটেলের মধ্যে সাগ্নিকই প্রধান। এছাড়া হাজারদুয়ারি প্রাসাদের পাশেই রয়েছে কয়েকটি হোটেল। এ হোটেলগুলো সবসময়ই ব্যস্ত থাকে।   

লালবাগের মিষ্টি বেশ জনপ্রিয়। এখানকার অন্যপূর্ণা সুইটসের মিষ্টির কদর পুরো মুর্শিদাবাদজুড়ে। এখানকার প্রত্যেকটি খাবারই স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদের নবাবি খাবার যেকোনো ভোজন রসিকের মন জয় করবেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
এসএনএস

আগের পর্ব পড়ুন:
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ
** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা
** ৪র্থ পর্ব: চার ভাইয়ের বাগান বিলাস ও একটি গুপ্তপথ
** ৫ম পর্ব: জগৎশেঠকে সপরিবারে হত্যা করা হয় যে প্রাসাদে
** ৬ষ্ঠ পর্ব: নুরলদীনের ‘জাগো বাহে’ শোনা যায় নসীপুর প্রাসাদে
** ৭ম পর্ব: কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম
** ৮ম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর কলিজাখেকো মেয়ের সমাধি!
** ৯ম পর্ব: হেস্টিংসের স্ত্রী, মেয়ের সমাধি ও একটি আর্মেনিয়ান চার্চ
** ১০ম পর্ব: মুজিবনগর ও পলাশী: বাংলার ইতিহাসের দুই আম্রকানন 

** ১১তম পর্ব: ৩শ বছরের ডাচ সিমেট্রি ও যোগেন্দ্র নারায়ণের মন্দির
** ১২তম পর্ব: সতীদাহ ঘাটের পাতালেশ্বর মন্দির

** ১৩তম পর্ব : আশি টাকার গাড়ি ও সোনার রথ
** ১৪তম পর্ব : ষড়যন্ত্রের গ্রিনরুম ছিল কাসিম বাজার

** ১৫তম পর্ব: কাসিম বাজার ছোট রাজবাড়ির বড় আয়োজন
** ১৬তম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর জগৎজয়ী কামান
** ১৭তম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি
** ১৮তম পর্ব: ফুটি মসজিদ: নির্মাণের অপেক্ষায় ৩শ বছর
** ১৯তম পর্ব: রোশনিবাগে শুয়ে আছেন নবাব সুজাউদ্দিন
** ২০তম পর্ব: মুর্শিদাবাদের শেষ নবাবের প্রাসাদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।