ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

শাহী জিলাপির বাদশাহী স্বাদ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
শাহী জিলাপির বাদশাহী স্বাদ ‘শাহী জিলাপি’

ঢাকা: জিলাপি তৈরির যত রেসিপি আছে তার অধিকাংশই মচমচে জিলাপির। তবে এই মচমচে জিলাপির বিপরীতেও আছে ভিন্নতা। চিকন চিকন ছোট জিলাপির পরিবর্তে কোনো কোনো জিলাপির আবার ওজন হয় ৩ থেকে ৫ কেজি। খেতে তুলতুলে এই জিলাপি দেখলেই মনে হয় যেন রাজা-বাদশাদের খাবারের আয়োজন। আর তাইতো এর নাম হয়েছে ‘শাহী জিলাপি’।

শনিবার (১১ মে) রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে ইফতারের জন্য একটি জিলাপি কিনলেন স্থানীয় বাসিন্দা আশেক আহমেদ। দোকানদার কাওছার আলী সেটি প্যাকেটে ভরে তুলে দিলেন দাঁড়িপাল্লায়।

ওজন দেওয়া হলে পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কেজি ৭০০ গ্রাম!

কী, অবাক হচ্ছেন? এটাই পুরান ঢাকার বিখ্যাত এবং ঐতিহ্যবাহী শাহী জিলাপি। ৮০০ গ্রাম থেকে শুরু করে একটি জিলাপিতেই যার ওজন গড়ায় পাঁচ কেজি পর্যন্ত। তবে শুধু আকারের জন্য নয়, যুগের পর যুগ শাহী জিলাপির টিকে থাকার অন্যতম কারণ হলো এর স্বাদ।

বেশ মোটা, প্যাঁচানো এই জিলাপি দেখলে জিভে জল চলে আসবে অনায়াসে। মাসকালাইয়ের ডাল, বেসন, ঘি, ডালডা, আর ময়দা দিয়ে তৈরি এ জিলাপি স্বাদের কারণেই এখনো রয়ে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

শাহী জিলাপির মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী হলো আড়াই কেজি ওজনের জিলাপি। আকার যত বড়, দামও তত বেশি। তবে দাম যাই হোক, ভোজনরসিক মানুষদের কাছে মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে শাহী জিলাপিই সবচেয়ে প্রিয়। তাইতো এটি যুগ যুগ ধরে বহন করে আসছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য।

চকবাজারের জিলাপি বিক্রেতা মো. আলী হোসেন জানান, বাপ দাদার আমল থেকেই পুরান ঢাকায় জিলাপি খুবই জনপ্রিয় খাবার। তাদের কাছ থেকেই এটি তৈরি করা শিখে আমিও এখন এই পেশায় আছি। তবে রমজানে যে জিলাপি তৈরি করি, তার মধ্যে পেশার থেকে নেশাটাই থাকে বেশি। আর শাহী জিলাপি ছাড়া তো এই এলাকার মানুষের ইফতারই জমে না। একদিকে বানাতে বানাতেই অন্য দিকে শেষ হয়ে যায়। শেষ বেলায় আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।  দোকানে সাজানো শাহী জিলাপিবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি শাহী জিলাপির দাম পড়ে ১৮০ টাকা। দেড় কেজি হলে ২৫০ টাকা, দুই কেজির হলে কেজি ৪০০ টাকা এবং আড়াই কেজির একটি জিলাপির দাম হয় ৪৭০ টাকার মতো। তবে পাঁচ কেজি বা তার ঊর্ধ্বে যে জিলাপিগুলো, সেগুলো সাধারণত বানানো হয় অর্ডার নিয়ে।

শুধু শাহী জিলাপি নয়, এর পাশাপাশি বাজারে আরো রয়েছে চিকন জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, প্যাঁচ জিলাপি আর আমিত্তি। এই জিলাপিগুলো শুধু নামে নয়, স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। আর এগুলোর দাম পড়বে ১২০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।

ইফতারের জন্য ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় পুরান ঢাকায় ইফতার কিনতে এসেছিল রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার ইফতেখার আহমেদ। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই রমজানে পরিবারের সদস্যদের জন্য ইফতারির মেন্যুতে মজাদার ভিন্ন স্বাদের শাহী জিলাপি রাখার চেষ্টা করি। কারণ ইফতারে মিষ্টি আইটেম না থাকলে পরিপূর্ণতা আসে না। আর সেই পূর্ণতা আনতে শাহী জিলাপির তুলনা নেই। এর স্বাদ ঠিক যেন বাদশাহী খাবারের মতো।

বিশেষত দুধ, ছানা ছাড়া যে মিষ্টিগুলো আমাদের দেশে তৈরি হয়, তার মধ্যে জিলাপি অন্যতম। আর রমজান মাসে এ জিলাপি দিয়ে মিষ্টিমুখ করতে পছন্দ করেন প্রায় সব রোজাদার। ফলে প্রতি বছর রোজা এলেই জিলাপির কদর বেড়ে যায় দ্বিগুণ। আর শাহী জিলাপির বেশ কদর তো রয়েছে নগরজুড়ে পুরো রমজানে। আর শুধু ইফতার নয়, বিভিন্ন মিলাদ মাহফিলেও জিলাপির স্থান মোটামুটি পাকাপোক্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
এইচএমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।