ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ভালোবাসার ফাগুন রাঙালো সৈকত

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
ভালোবাসার ফাগুন রাঙালো সৈকত

কক্সবাজার: প্রকৃতিতে এসেছে মধুর বসন্ত। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভালোবাসা দিবস। পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের রঙ লেগেছে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারেও। 

একে তো সরকারি ছুটির দিন, তার ওপর বসন্ত-ভালোবাসা দিবস। বিশেষ দিনকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উপচে পড়ছে ভালোবাসার ঢেউ!  ফাগুনের আগুনে জ্বলছে পর্যটন শহরটি।

 

শুধু পর্যটক-ই নয়, ফাগুন আর ভালোবাসার আনন্দে মেতে ওঠেছেন স্থানীয়রাও। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে বাড়তে থাকে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস! শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হবে বসন্ত আর ভালোবাসার মহামিলন! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মিলনে যোগ দিতে সৈকতে জমায়েত হবেন লাখো পর্যটক।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এখন কেবল শীতকালীন পর্যটন মৌসুমে নয়, সারা বছরই কমবেশি লোকজন কক্সবাজারে বেড়াতে আসে। তবে ঈদ, পূজাসহ নানা উৎসবে পর্যটকের ভিড় বেশি থাকে।  

তিনি জানান, ফাগুন উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। শনিবারও (১৪ ফেব্রুয়ারি) একই অবস্থা থাকবে। তবে রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে চাপ কমে যাবে।  

এ সময়ে কক্সবাজার শহরের বাইরের পর্যটন এলাকা বিশেষ করে সেন্টমার্টিনে ব্যাপক ভিড় থাকবে বলে জানান ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান।  

তিনি বলেন, শুক্রবার ফাগুন দিবসে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণীসহ অন্তত ৩ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে অবস্থান করবেন। ইতোমধ্যে এ প্রবাল দ্বীপের প্রায় আড়াইশ হোটেলের সব কক্ষই আগাম বুকিং হয়ে গেছে।    

‘অন্যান্য বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগের দিন পয়লা ফাগুন উদযাপন করা হলেও এবার এ দুই বিশেষ দিন এক হয়ে যাওয়ায় মানুষের কাছে দিনটি হয়েছে আরও বিশেষ। ’

অনেকেই বলছে, এ যেন ফাগুন আর ভালোবাসার মহামিলন। তাই এ দিনকে ঘিরে কক্সবাজারে অন্তত লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে, কেউ বাবা-মা; অনেকেই প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে ছুটে এসেছেন বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।  

সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে সময় কাটানো, সমুদ্র স্নান, বিকেলে প্রিয়জনের পাশে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত অবলোকনসহ প্রিয়সব মুহূর্ত যেন রঙিন হয়ে ওঠেছে ভালোবাসার রঙে। আর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গেও যেন চলছে ভালোবাসার মিতালি।  

ফাগুনের এ উত্তাপ নিতে বৃহস্পতিবার সবান্ধবে কক্সবাজারে এসেছেন ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের ঈশিতা, বগুড়ার কমল, ফরিদপুরের মোশাররফ ও ঢাকার কানিজ।  

তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সেন্টমার্টিনে হোটেলে কক্ষ পাননি বলে শুক্রবার দিনে দিনেই ফিরে আসবেন কক্সবাজারে। ঘুরবেন শহরের পাশের ভার্জিন দ্বীপ সোনাদিয়ায়।  

হরেক রকম প্রজাপতি, রাজকাঁকড়া আর চামচ ঠুঁটো বাটান পাখি দেখা ও ছবি তোলার ইচ্ছাও তাদের।

তবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বেড়ানোর ফাঁকে গবেষণার কাজটিও সেরে নিতে চান। দেখতে চান সেখানকার ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থা। তাদের ভাষ্য, অসাধারণ সুন্দরের হাতছানি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।  

তবে বরিশালের তানিয়া ও তাফসির এসেছেন ভিন্ন কারণে। আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে আসতে হয়েছে বলে দেখে যাচ্ছেন কক্সবাজারও।  যেন কলার বেচার সঙ্গে রথ দেখাও গেলো।  
 
নন্দিতা ও নারায়ণ এসেছেন আদিনাথ মন্দিরে পূজা দিতে। তারা ভাবলেন, যে দিনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সেই দিনেই যাবেন আদিনাথে।    

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে আসা স্নিগ্ধা রহমান বলেন, এমনিতেই আজ ভালোবাসা দিবস, কিন্তু আমাদের জন্য এই দিনটি আরো স্পেশাল, কারণ তিন বছর আগে এইদিনেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। তাই বিশেষ দিনে প্রিয়জনের সঙ্গে বিশেষ একটি জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, সময় কাটানো আসলেই আমার কাছে অন্য রকম অনুভূতি। সত্যিই ভালো লাগছে।

কক্সবাজার শহরের বন ভবনের সামনের ফুল বিক্রেতা বাদশা বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই ফুলের দোকানে চাপ তৈরি হয়েছে। তবে শুক্রবারই অর্ডার বেশি।  

এদিকে বিশেষ দিনে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিশেষ দিনটিকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও সৈকতসহ আশপাশের এলাকায় পর্যটকদের আগমন ও স্থানীয়দের পদচারনা নিরাপদ করতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও  সাদা পোশাকধারী পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আশা করছি এই দিনে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে। তাই সমুদ্র সৈকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।  

তিনি বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পোশাকধারী এবং সাদা পোশাকে সদস্যরা রয়েছেন। বিশেষ করে লাবনী, সুগন্ধা কলাতলী বিচসহ আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এসবি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।