ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

তবু চীনে বন্ধ হচ্ছে না বন্যপ্রাণী খাওয়া

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২০
তবু চীনে বন্ধ হচ্ছে না বন্যপ্রাণী খাওয়া খাবারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বাদুড়।

নভেম্বরে চীনে যখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, দেশটির বিভিন্ন স্থানে তখন সংক্রমণ বাড়বে সন্দেহে বন্ধ করে দেওয়া হয় বন্যপ্রাণীর ব্যবসা। পাশাপাশি খাবার হিসেবে বন্যপ্রাণী পরিবেশনেও আসে নিষেধাজ্ঞা।

নিশ্চিতভাবে এখনো জানা যায়নি ঠিক কোন প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ। তবে অনেকেই এ ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী করছেন বাদুড়, সাপ ও বনরুইসহ বিভিন্ন প্রাণীকে।

বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আরেকটি মহামারি রোধ করতে চীন তার আকর্ষণীয় বন্যপ্রাণী শিল্পের লাগাম টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারিতে ‘বাস্তুসংস্থান, বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক অবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থল বন্যপ্রাণী’র সব ধরনের পালন ও খাদ্য হিসেবে ভোগ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

চীনে খাদ্য হিসেবে বন্যপ্রাণী গ্রহণের সংস্কৃতি বহু পুরনো। এ ছাড়াও ওষুধ, পোশাক, অলঙ্কার তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে বন্যপ্রাণী ব্যবহার করা হয়।  

এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনে বন্যপ্রাণীকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগেও চীনে এমন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে চীনে ভাইরাস সংক্রমণের সন্দেহে খাটাশ পালায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সেসময় বিপুলসংখ্যক খাটাশ নিধন করা হয় দেশটিতে। এছাড়া সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য চীনের গুয়াংজু প্রদেশে সে সময় সাপ কেনা-বেচা নিষিদ্ধ করা হয়।

চীনের বাজারে খাঁচায় বন্দী এক খাটাশজনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চীনে বন্যপ্রাণী থেকে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষায় প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হলো। তবে বেইজিংকে এ নিষেধাজ্ঞার ফাঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে হবে এবং বন্যপ্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণে চীনের সাধারণ সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে হবে।

নভেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে প্রথম ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। ধারনা করা হয়, উহানের মাছ বাজার থেকেই এ ভাইরাসের উৎপত্তি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সাপ, রেকুন কুকুর, সজারু ও হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী এ মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি ভোক্তাদের জন্য এ বাজারেই বিভিন্ন প্রাণীদের জবাই করে খাবার উপযোগী করে তৈরি করা হয়।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের মাছ বাজার

শুধু উহানের এ বাজারই নয়, সারা চীনেই এ ধরনের বাজার রয়েছে।

মহামারির শঙ্কা আরও ভয়াবহ হয়, যখন বিভিন্ন পরিবেশের প্রাণীকে একই পরিবেশে একই তাপমাত্রায় পাশাপাশি রাখা হয়।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন প্রাণীরই নিজস্ব ধরণের ভাইরাস থাকে। একসঙ্গে গাদাগাদি করে রাখায় এক প্রাণীতে থাকা ভাইরাসের সঙ্গে অন্য একটি প্রাণীতে থাকা ভাইরাসের প্রজাতির মধ্যে সংমিশ্রণ হয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। যারা এ পরিবেশে নিয়মিত থাকেন বা যাতায়াত করেন, তাদের এ সংমিশ্রিত ভাইরাসে সংক্রমণের বিপুল সম্ভাবনা থাকে।

চীনে বন্যপ্রাণীর বাণিজ্যের প্রসার বিপুল। ২০১৭ সালে চীনা সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে বন্যপ্রাণীর মোট বাজার ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা)। এছাড়া এ বাণিজ্যে দেশটির দশ লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ভোক্তারাও জানান, খাবার হিসেবে বন্যপ্রাণী গ্রহণকে দেশটিতে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো অতিথিকে আপ্যায়ন করাতে যদি বন্যশুকর বা ময়ূরের মতো প্রাণী পরিবেশন করা হয়, তবে তাকে সম্মানিত করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।

নিষেধ থাকলেও যে চীনে শিগগিরই বন্যপ্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ বন্ধ হচ্ছে না, ভোক্তাদের এ প্রতিক্রিয়ায় সে বিষয়টিই প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২০
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।