ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ফজলে হাসান আবেদের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী সোমবার

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
ফজলে হাসান আবেদের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী সোমবার শিশুদের সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদ।

ঢাকা: ছিলেন জ্ঞানের আধার। জ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই যেখানে তার দখল ছিল না। ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি বা উন্নয়ন। তার ছিল এক অসাধারণ কমনসেন্স। তার চরিত্রে একটা ম্যাজিক্যাল আকর্ষণ ছিল। যে-ই তার সংস্পর্শে এসেছে প্রায় সবাই মুগ্ধ হয়েছে। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আর সবার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই পরশমণিটি অন্য কেউ নয়, আমাদের গর্বের মানুষ; স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) এই মহান মানুষটির ৮৪তম জন্ম বার্ষিকী। যিনি শিখিয়েছেন, ‘তোমাকে যে কেউ শেখাতে পারে।

সে উচ্চশিক্ষিতই হোক বা গ্রামের একজন দরিদ্র নারী বা একজন রিকশাওয়ালা। সবারই যার যার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান আছে। একটা শিশুও শেখাতে পারে। যার যেটা সমস্যা সে-ই সেটা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানে, কাজেই তার থেকেই শোনো, তার থেকেই ধারণা নাও এবং সমাধান খুঁজে বের করো’।

সত্যিই তাই। তিনি সেই সমাধান খুঁজে পথ চলেই তৈরি করেছেন ব্র্যাক। এগিয়ে নিয়ে গেছেন বিশ্বপরিমণ্ডলে। তার শয়নে, স্বপনে, নিদ্রায়, জাগরণে ছিল ‘ব্র্যাক’। ব্র্যাককে কীভাবে সংগঠিত করতে হবে, কীভাবে নিজের পায়ে দাঁড় করানো যাবে, কর্মীদের কীভাবে আরো দক্ষ এবং শক্তিশালী করা যাবে, কর্মসূচিগুলোকে কেমন করে মান বজায় রেখে আরো বড় করা যাবে, বৈদেশিক নির্ভরতা থেকে মুক্ত করা যাবে, দেশ-বিদেশ থেকে আরও দক্ষ লোকজন এনে কর্মী এবং কর্মসূচির উন্নতি করা যাবে, এ-ই ছিল তার চিন্তা এবং ধ্যান। অবশ্য তিনি এক্ষেত্রে সফলও।

অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটারও ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, এই বিশ্বাসে ভর করেই তিনি সফলভাবে গড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ যা সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু এই সাহস, এই আকাঙ্ক্ষা একেবারেই শেকড় থেকে আসা। পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের স্বপ্নের ফেরিওয়ালার রূপ নিয়েছিলেন তিনি। তাইতো প্রশ্ন জাগে, ফজলে হাসান আবেদের মতন মানুষ কয়টা হয়?

দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নাইট উপাধিতে ভূষিত হন ফজলে হাসান আবেদ। ওই উপাধি দেওয়ার ঘোষণায় ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‌'বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার ও সামাজিক উন্নয়নে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যে গত চার দশক ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ায় আবেদকে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে। '

ফজলে হাসান আবেদের ৮৪ তম জন্ম বার্ষিকী সোমবার (২৭ এপ্রিল)। তবে যে দিনটিকে অত্যন্ত আনন্দে বরণ করার কথা, সেই দিনটি আজ শোকে পালন হচ্ছে মর্ম অনুধাবন করে চলা মানুষটির জন্য। শিক্ষা, ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, উন্নয়ন; সব ক্ষেত্রেই বিস্তর অবদান রেখে চলা মানুষটি না থাকার মধ্য দিয়েই তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করছেন তিনি আছেন।

সামাজিক ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য স্যার ফজলে হাসান আবেদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তবে এর সবগুলোই এখন তিনি ছাড়া বড় একাকী। ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করে গতবছর ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুর আগে ব্র্যাককে স্যার ফজলে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থার মর্যাদায়। তার এই সৃষ্টির মধ্য দিয়েই রবীন্দ্রভক্ত মানুষটি আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন চিরদিন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।