গবেষণাটি বিখ্যাত গবেষণাগ্রন্থ ‘দ্য জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত হয়।
তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী ৪৭ জন শিশু নিয়ে গবেষণাটি করা হয়।
গবেষণা প্রবন্ধটির প্রধান লেখক ডা. জন হাটন ও তার সহকর্মীরা শিশুদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাদের শিশুরা কতক্ষণ স্ক্রিনে সময় কাটান সে তথ্য নেন।
এতে স্ক্রিন-কিউ টেস্ট ব্যবহার করা হয়। তাদের ইন্টারনেট সুবিধা, ব্যবহারের পরিমাণ, দেখার বিষয়বস্তু সব লিপিবদ্ধ করা হয়। ১৫টি প্রশ্নের একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যারা কম নম্বর পেয়েছে, তারা স্ক্রিনে বেশি সময় কাটিয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক্সের (এএপি) মতে, তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের এক ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনে কাটানো উচিত না।
গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুরা ট্যাবলেট, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করে, তাদের মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের পরিমাণ কমে গেছে। মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের কাজ হলো মস্তিষ্কের এক অংশ থেকে অন্য অংশে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছানো।
এতে, ওই শিশুদের ভাষা দক্ষতাসহ চিন্তাক্ষমতা কমে যায়। তাদের কথা বলা ও পড়ার ক্ষমতা ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না।
সিনসিনাতি চিলড্রেন্স হসপিটাল মেডিক্যাল সেন্টারে এসব শিশুদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। তারা এই পরীক্ষায় কম নম্বর পায়।
একই সঙ্গে, তাদের এমআরআই স্ক্যান করা হয়। তিনটি পরীক্ষা করে তাদের পরীক্ষা করা হয় ভাষা দক্ষতা। সেখানে তাদের শব্দ ব্যবহার, পড়া, তথ্য বোঝার ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়।
যাদের স্ক্রিন-কিউ বেশি, তাদের মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের পরিমাণ কম। তাদের নিউরনের মাইলিনের গঠন পরিবর্তন হয়ে গেছে। মাইলিন হচ্ছে চর্বি সমৃদ্ধ এক ধরনের পদার্থ যা মস্তিষ্কের সাদা অংশের নিউরন তন্তুকে ঢেকে রাখে।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে বার্তাবাহকের কাজ করে মাইলিন। কোনো রোগ বা অন্য কারণে এর পরিমাণ কমে গেলে, বার্তা পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। এছাড়া, শিশুদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও কমে যায়।
যারা স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায় অর্থাৎ যাদের স্ক্রিন-টাইম বেশি, তারা কগনিটিভ টেস্টেও কম নম্বর পেয়েছে। তাদের ভাষাদক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। নিজেদের চিন্তা ও অনুভবকে সহজে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না তারা।
বিভিন্ন বস্তু শনাক্ত করে সেগুলোর নাম বলায় তাদের গতি ছিল ধীর। সাধারণত শিশুরা পড়তে ও লিখতে শেখার আগে এটি শেখে।
তবে, গবেষকরা নির্দিষ্ট করে বলেননি প্রতিদিন ঠিক কত ঘণ্টা স্ক্রিনে সময় কাটালে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ডা. হাটন বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রতি দশজনের মধ্যে ছয়জন শিশুর নিজের স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট আছে। এবং প্রতি দশজনের চারজন শিশুর বেডরুমে টেলিভিশন বা অন্য ডিভাইস রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তনে অল্প হলেও স্ক্রিনভিত্তিক মিডিয়া ব্যবহারের প্রভাব আছে কি-না, তা নিয়ে এ গবেষণায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
‘এ বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এটি বোঝা দরকার কতক্ষণ স্ক্রিন-টাইম আমাদের জন্য নিরাপদ। ’
গবেষণাটিতে শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনের বয়সে স্ক্রিন-টাইমের প্রভাবের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে, এই গবেষণাটির সমালোচকরা জানান, এই ফলাফল বিভ্রান্তিকর। এটি দেখে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হলো কি-না তা নিয়ে বাবা-মাকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে নিষেধ করেন তারা।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের প্রফেসর ও ডেভেলপমেন্টাল নিউরোসাইকোলজি বিশেষজ্ঞ ডরোথি বিশপ বলেন, শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে স্ক্রিন-টাইমের প্রভাব আছে কি-না সে বিষয়ে গবেষণাটি যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি। তাছাড়া, গবেষণাটি অনেকটা একপেশে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) প্রফেসর ডেরেক হিল বলেন, এই কাজটি চাঞ্চল্যকর। তবে, ফলাফল ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তাছাড়া, এই ফলাফল প্রাথমিক। মাত্র ৫০ জন শিশু সব শিশুকে উপস্থাপন করতে পারে না।
তবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় বলা হয়, ৮-১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যাদের স্ক্রিন-টাইম বেশি, তাদের শিখন ক্ষমতা ধীর।
ব্রিটেনের তিন থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের অর্ধেকের বেশি শিশু প্রতি সপ্তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। প্রতি পাঁচজনে একজনের নিজের ট্যাবলেট রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
এফএম/