‘সংসদ ও আদালতের প্রতি সৎ ও সত্যবাদী না থাকার’ কারণে শুক্রবার (২৮ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার কিছু সময় পর নওয়াজের বিরুদ্ধে রায় দেন বিচারপতি ইজাজ আফজাল খানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আদালত বেঞ্চ। রায়ে নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি মামলা শুরুরও নির্দেশ দেন আদালত।
রায়ের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া বিশেষ বিবৃতিতে বলা হয়, আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো অনেক পোক্ত যুক্তি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করেছেন। তার আগে অবশ্য রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় নওয়াজের দল মুসলিম লিগের এক মুখপাত্র জানান, রায়ের বিরুদ্ধে সব রকমের আইনি ও সাংবিধানিক লড়াই চালিয়ে যাবে মুসলিম লিগ।
নওয়াজের বিদায়ের ফলে ২০১৮ সালে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীসহ সংসদ নির্বাচনের সময় পর্যন্ত কে তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে, তারা যেন রায় কার্যকরে নওয়াজের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। রায়ে একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী ইসহাক দরকেও স্বপদে অযোগ্য ঘোষণা করে তাদের সংসদীয় আসন শূন্য করার কথাও বলা হয়।
গত বছরের এপ্রিলে পানামা পেপার্সে প্রকাশিত লাখ লাখ নথিতে বিশ্বের শত শত রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের গোপন সম্পদের তথ্যের পাশাপাশি নওয়াজ ও তার পরিবারের নামও আলোচনায় আসে। এরপরই নওয়াজের পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামেন প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ইমরান খান।
বেশ কিছু দিন রাজধানী ইসলামাবাদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে পরে মাঠের আন্দোলন থেকে সরে এসে নওয়াজকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে ইমরানের দল। সেই মামলায় গত এপ্রিলে প্রাথমিক শুনানি হলে বিভক্ত রায় দেন আদালতের বিচারপতিরা। এ কারণে তখন উতরে যান নওয়াজ।
তবে সেসময় নওয়াজ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গভীর অনুসন্ধানে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই তদন্ত দল অনুসন্ধান শেষে আদালতে নথিপত্র উপস্থাপনের পর শুক্রবার এই রায় ঘোষণা হলো।
পানামা পেপার্সের নথি অনুযায়ী, সেখানকার ল’ ফার্ম ‘মোসাক ফনসেকা’র মাধ্যমে শত শত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক গোপনে সম্পদ আয় করে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে রেখেছেন। ফাঁস হওয়া ওই সাড়ে ১১ লাখ নথির মধ্যে নওয়াজের সন্তান মরিয়াম, হাসান ও হুসেইনের নামে ৮টি অফশোর কোম্পানি (করফাঁকি দিতে তথ্য গোপন রেখে সুবিধাজনক দেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি) থাকার তথ্যও আসে।
কিন্তু অভিযোগ প্রথম থেকেই উড়িয়ে দিয়ে নওয়াজ ও তার স্বজনরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নওয়াজের দলও তার পক্ষে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। তবে রায় ঘোষণার পর তেহরিক-ই-ইনসাফসহ বিরোধীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছে। তারা আশা করছে, জবাবদিহি আদালতেও নওয়াজ পরিবার দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো শেষ করতে পারেননি। ১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালে দুইবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় কোনোবারই মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি নওয়াজও। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মুসলিম লিগের এই সরকারপ্রধানের মেয়াদ শেষ হতে আর বছরখানেকেরও কম সময় বাকি। ঠিক এই সময়ে এসে তাকে বিদায় নিতে হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৭
এইচএ
** প্রধানমন্ত্রী পদে ‘অযোগ্য’ নওয়াজ শরিফ
** নওয়াজ শরিফের ভাগ্য নির্ধারক রায় দুপুরে