আরও পড়ুন
** হরিয়ানায় গুরুর সম্পত্তি থেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণের আদেশ
** ধর্ষণে দোষী গুরমিত রাম রহিম, ভারতজুড়ে সতর্কতা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হরিয়ানা ও পাঞ্জাব উভয় রাজ্যের রাজধানী চন্ডিগড়সহ আশপাশের মোট ১১টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। হরিয়ানায় নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী পর্যন্ত।
রায় ঘোষণার পরই রাম রহিমকে নিয়ে যাওয়া হয় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে। সাজা ঘোষণা পর্যন্ত তিনি থাকবেন একটি সেনাঘাঁটিতে। ধারণা করা হচ্ছে, রাম রহিমের সাত বছর কারাদণ্ড ঘোষণা করা হতে পারে।
এ ‘ধর্মীয় গুরু’র রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানা-পাঞ্জাব-রাজস্থান-উত্তরপ্রদেশ রাজ্যসহ পুরো ভারতজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় নামানো হয় আধা-সামরিক বাহিনীসহ পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য। মোতায়েন করা হয় ৬০০ সেনাসদস্য। কয়েকটি এলাকায় ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার জন্য। পঞ্চকুলায় ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চকুলা, চন্ডিগড়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করে রাম রহিমের অনুসারীরা। পঞ্চকুলায় গণমাধ্যমের গাড়ি ও পুলিশের ওপর হামলার চালানো হয়। অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায় পাঞ্জাবের রেলস্টেশন ও পেট্রোল পাম্পে। এছাড়া যেখানে যে অবস্থায় বাস, ট্রাক, ছোট-বড় গাড়ি পাওয়া গেছে, সেখানেই অগ্নিসংযোগ করেছে রাম রহিমের ভক্তরা। পঞ্চকুলা ও রাম রহিমের আশ্রমস্থল সিরসার আকাশে কেবল ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং হরিয়ানা ও পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানানো হয় সহিংসতার সবিশেষ পরিস্থিতি। উত্তেজনা প্রশমনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দিল্লিবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ও বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ফলে রাত গড়াতেই পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। অবস্থা পর্যবেক্ষণে নেমে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার বলেন, পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চন্ডিগড়ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জানায়, সারা দিনে অন্তত হাজারখানেক রাম রহিম ভক্তকে পাকড়াও করা হয়েছে। ধরা হয়েছে ধর্মগুরুর ছয় বিশেষ কমান্ডোকেও। সহিংসতায় নেতৃত্বদাতাদের ধরে ফেলার পর পরিস্থিতি এখন বেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও দিল্লিসহ পুরো ভারতজুড়ে সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে দেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
হরিয়ানাভিত্তিক ‘অলাভজনক’ সমাজকল্যাণ ও আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘ডেরা সাচা সৌদা’র প্রধান রাম রহিমের ভারতজুড়ে লাখো ‘ভক্ত’ রয়েছে। রাম রহিম একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও নির্মাতা। তার ‘ডেরা সাচা সৌদা’ গঠিত হয়েছে হিন্দু, মুসলিম, শিখসহ সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে।
অনুসারীদের মধ্যে দুই নারীকে রাম রহিম ১৯৯৯ সালে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। এরপর সেই মামলার বিচার করতে হরিয়ানারই পঞ্চকুলায় বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর মাধ্যমে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে শুক্রবার রায় ঘোষণা হলো।
এদিকে, সহিংসতার এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতিতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী মোদি, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীসহ কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তারা সবাই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এ ‘ধর্মীয় গুরু’র বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ভারতে অবস্থানরত নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭/আপডেট ১৮২৩ ঘণ্টা
এইচএ/