শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে দেওয়া ওই রায়কে ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সন্ধ্যার দিকে সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণ বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
চন্ডিগড়ের একজন বাসিন্দার আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস সিং শরণের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের দেওয়া আদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্ভয়ে যথাযথ পদক্ষেপও নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।
এ বিষয়ে বাকি আদেশ শনিবার (২৬ আগস্ট) ঘোষণা করা হবে। তার আগে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে চাওয়া হয়েছে প্রতিবেদন।
এদিকে রাত ৮টা পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাম রহিম ভক্তদের সংঘাতে ৩১ জন নিহত হয়েছে। এদের কয়েকজন পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও, কিছু মারা গেছে সংঘর্ষে আহত হয়ে। এছাড়া আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শতাধিক মানুষ।
রাস্তায় রাস্তায় হাজারো ‘ভক্তের’ সমাগম ও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে বিকেলে রাম রহিমকে ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন রাজ্যের পঞ্চকুলায় স্থাপিত কেন্দ্রীয় তদন্ত অধিদফতরের (সিবিআই) বিশেষ আদালত। সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী ২৮ আগস্ট (সোমবার)।
রায় ঘোষণার পরই রাম রহিমকে নিয়ে যাওয়া হয় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে। সাজা ঘোষণা পর্যন্ত তিনি থাকবেন একটি সেনাঘাঁটিতে। ধারণা করা হচ্ছে, রাম রহিমের সাত বছর কারাদণ্ড ঘোষণা করা হতে পারে।
এ ‘ধর্মীয় গুরু’র রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানা-পাঞ্জাব-রাজস্থান রাজ্যসহ পুরো ভারতজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় রয়েছে আধা-সামরিক বাহিনীসহ পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য। মোতায়েন করা হয়েছে ৬০০ সেনাসদস্য। কয়েকটি এলাকায় ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার জন্য। পঞ্চকুলায় ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চকুলা, চন্ডিগড়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করে রাম রহিমের অনুসারীরা। পঞ্চকুলায় গণমাধ্যমের গাড়ি ও পুলিশের ওপর হামলার চালানো হয়। অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায় পাঞ্জাবের রেলস্টেশন ও পেট্রোল পাম্পে। এছাড়া যেখানে যে অবস্থায় বাস, ট্রাক, ছোট-বড় গাড়ি পাওয়া গেছে, সেখানেই অগ্নিসংযোগ করেছে রাম রহিমের ভক্তরা।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং হরিয়ানা ও পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানানো হয়েছে সহিংসতার সবিশেষ পরিস্থিতি। উত্তেজনা প্রশমনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দিল্লিবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
হরিয়ানাভিত্তিক ‘অলাভজনক’ সমাজকল্যাণ ও আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘ডেরা সাচা সৌদা’র প্রধান রাম রহিমের ভারতজুড়ে লাখো ‘ভক্ত’ রয়েছে। রাম রহিম একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও নির্মাতা। তার ‘ডেরা সাচা সৌদা’ গঠিত হয়েছে হিন্দু, মুসলিম, শিখসহ সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে।
অনুসারীদের মধ্যে দুই নারীকে রাম রহিম ১৯৯৯ সালে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। এরপর সেই মামলার বিচার করতে হরিয়ানারই পঞ্চকুলায় বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর মাধ্যমে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে শুক্রবার রায় ঘোষণা হলো।
এদিকে, এ ‘ধর্মীয় গুরু’র বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ভারতে অবস্থানরত নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
এইচএ/