তবে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই অঞ্চলের স্বাধীনতা অর্জনের এমন তৎপরতায় নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইরান। স্বাধীনতা অর্জনের তৎপরতায় বাগদাদ সরকারের ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি দমন কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা জানালেও তুরস্ক ও ইরানের ভয়, তাদের কুর্দি জনপদেও এ ধরনের স্বাধীনতার চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
আইএস জঙ্গিদের তাণ্ডবের মুখে প্রায় দু’বছর অনেকটা অকার্যকর থাকা কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের এই পার্লামেন্টে শুক্রবার প্রথমবারের মতো অধিবেশন বসে। এতে ২৫ সেপ্টেম্বর গণভোটের প্রস্তাব আনা হলে তা পাস হয়ে যায়। ১১১ এমপির মধ্যে ৬৫ জন এমপিই ভোট দেন গণভোটের পক্ষে।
গণভোট পাসের পর কুর্দি এমপিদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়। ক্ষমতাসীন কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (কেডিআর) নেতা ওমেদ খোশনাও বলেন, আমরা এই সময়ের জন্য একশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি।
প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর কুর্দিস্তানের রাজধানী ইরবিলের রাস্তায় নেমে আসে স্থানীয় জনগণ। কুর্দিস্তানের পতাকাবাহী জনতা এসময় পার্লামেন্টের নেতাদের বীর বলে আখ্যা দেয়।
কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা মাসুদ বারজানি এ বিষয়ে বলেন, কুর্দিস্তানের গণভোটের বিকল্প আমরা এখনও কোনো প্রস্তাব পাইনি। আমাদের সামনে এখন এই গণভোটই। তবে স্বাধীনতার জন্য গণভোটের এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হোয়াইট হাউসের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার ভোট আইএস দমনের প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করতে পারে।
বাগদাদের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ও টেকসই সংলাপের আহ্বান জানিয়ে হোয়াইট হাউস এই গণভোট আয়োজন না করারও অনুরোধ জানায় কুর্দি নেতাদের।
কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগান গণভোট স্থগিত না করার সিদ্ধান্তকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলে অভিহিত করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলেও কুর্দিদের স্বাধীন কোনো রাষ্ট্র নেই। ইরাকের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ শতাংশ এই কুর্দিরা দশকের পর দশক ধরে নৃশংস নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে সাদ্দাম হুসাইনের ইরাকের সঙ্গে কুয়েত ও পশ্চিমা জোটের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর স্বায়ত্তশাসন লাভ করে কুর্দিস্তান।
কিন্তু স্বায়ত্তশাসন পেলেও কুর্দিরা অভিযোগ করে আসছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যের শিকার। তুরস্ক ও ইরানের কুর্দিরাও অধিকার-বঞ্চনার অভিযোগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে। এরমধ্যে আইএসের কথিত খেলাফতের যুদ্ধ শুরু হলে কুর্দিরাও বাগদাদ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে নামে। ক’মাস আগে ইরাক থেকে আইএস বিতাড়িত হতে থাকায় স্বাধীনতার দাবিতে সরব হয় কুর্দিরা।
তিন মাস আগে কুর্দিস্তানের শীর্ষ রাজনীতিক ও কর্মকর্তারা একটি গণভোট আয়োজনের বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছান। তবে সেজন্য পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের দরকার হয়। শুক্রবার হয় সে ভোট।
তবে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কুর্দিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবে না জানিয়ে আঞ্চলিক রাজনীতিকরা বলছেন, এই গণভোট আয়োজন করা হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য বাগদাদ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথ সহজ করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এইচএ/