রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) সারাদেশে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে সন্ধ্যা ৬টা (বাংলােদশ সময় রাত ১০টা) পর্যন্ত।
এবার দেশটিতে প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ ভোটার তাদের অধিকার প্রয়োগ করছেন। এরমধ্যে নারী ভোটার প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ, আর পুরুষ ভোটার প্রায় ৩ কোটি।
নিয়ম অনুযায়ী, এই ভোটাররা দু’টি করে ভোট দেবেন। একটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীকে, অপরটি দলকে। জার্মানিতে কোনো দল মোট ভোটের ৫ শতাংশ না পেলে সেই দল সংসদে (বুন্দেসতাগ) প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। বুন্দেসতাগের মোট ৫৯৮ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে রোববার সরাসরি নির্বাচন হচ্ছে। বাকি ২৯৯ আসনে দলীয় ভোটপ্রাপ্তির শতাংশের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন দলের প্রার্থী তালিকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
ভোটগ্রহণ শেষেই পাওয়া যাবে বুথফেরত জরিপের ফল। তখনই বোঝা যাবে কে আসছেন জার্মানির সরকারে। মেরকেলের সিডিইউ, নাকি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রাক্তন স্পিকার মার্টিন শুলজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসপিডি)। যদিও মেরকেলের বর্তমান জোট সরকারেরই অংশীদার শুলজের এসপিডি।
নির্বাচন-পূর্ব জরিপগুলো বলছে, বিগত এক যুগের মতো এবারও ভোটে এগিয়ে থাকছে মেরকেলের নেতৃত্বাধীন দল। সর্বশেষ একটি জরিপের ফলাফল বলছে, মেরকেলের দল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট পাবে। ক্ষমতাসীনদের প্রতিদ্বন্দ্বী এসপিডি পাবে ২৩ শতাংশ ভোট। ফলাফল এমন হলে এবারও মেরকেল একক সরকার গঠন করতে পারবেন না। সেজন্য হয়তো এই শুলজের দলের সঙ্গেই ফের জোট গঠন করতে হতে পারে তাকে।
এবার বুন্দেসতাগে প্রতিনিধিত্ব চাইছে প্রাক্তন পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি বা বাম দল, পরিবেশবাদী সবুজ দল, লিবারেল গণতান্ত্রিক দল এবং অল্টানেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প নামক কট্টর ডানপন্থি এক দলও। অন্য দলগুলোর প্রধানত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক থাকলেও জার্মানির জন্য বিকল্প নামে দলটি মুসলিম, অভিবাসী ও শরণার্থী-বিদ্বেষী। জার্মান রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা জানিয়ে বলছেন, এরাও ৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে উল্লেখযোগ্য আসন বাগিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
যদিও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা মেরকেল ও শুলজ বরাবরই জার্মান জনগণকে জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হতে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। নির্বাচনে আগে মেরকেল সমর্থকসহ জনগণের উদ্দেশে বলেন, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে এবং সংবিধান শতভাগ নিরাপদ রাখতে ভোট দিন।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানে শিক্ষক মেরকেলের রাজনীতিতে পদার্পণ ৩৪ বছর বয়সে। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের সময় পূর্ব জার্মানির প্রধানমন্ত্রী লোথার ডে-মেসিয়ারের রাজনৈতিক সচিব হিসেবে রাজনীতির মঞ্চে আসেন মেরকেল। এরপর তিনি বৃহত্তর জার্মানির প্রথম নির্বাচনে বুন্দেসতাগের সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে মন্ত্রী করে নেন তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল। ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে কোলের নেতৃত্বে সিডিইউ’র ভরাডুবি হলে নেতৃত্বে আসেন ৪৪ বছর বয়সী মেরকেল।
দলকে গুছিয়ে নেওয়ার পর ২০০৫ সালে প্রথম জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন মেরকেল। তারপর থেকে কেবল জার্মানিই নয়, পুরো ইউরোপকেই যেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেরকেল। জার্মানির ‘ইউরো-সংশয়বাদী’দের তিনি যেমন সন্তুষ্ট করেছেন বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে, তেমনি ‘ইউরোপ-বান্ধব’দেরও খুশি করেছেন দলের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ সত্ত্বেও সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে৷
ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসী-শরণার্থী স্রোত, ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট, জার্মানির রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরদারিসহ নানা ইস্যুতে মেরকেল মাঝেমধ্যে বেকায়দায় পড়লেও ধীরে-সুস্থে জনগণের মন-মর্জি বুঝে পদক্ষেপ নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পূর্ণোদ্যমে। গ্রিস, ইতালি, ফ্রান্স এমনকি যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করলেও মেরকেলের দৃঢ় ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণেই জার্মানিকে পড়তে হয়নি তেমন কোনো সংকটে। এই ভাবমূ্র্তিই মেরকেলকে চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর হওয়ার পথে এগিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এইচএ/