শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে এমনটাই জানা গেছে।
খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার হারারে ওপেন ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে নীল ও সবুজ গাউন পরে এসেছিলেন মুগাবে।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
বক্তব্য দেওয়ার সময় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণা করলে উপস্থিতরা মুগাবেকে স্বাগত জানায়, যিনি টানা ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় রয়েছেন! তবে ওই সময় তার সঙ্গী কাউকে দেখা যায়নি। উপস্থিত ছিলেন না সেনাপ্রধানও।
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার উত্তরসূরী কে হবেন-এই নিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।
এর জের ধরেই গত সপ্তাহে স্ত্রীর পরামর্শে সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগবাকে বহিষ্কার করেন মুগাবে। এরপরই মূলত দেশটিতে অস্থিরতার সূত্রপাত হয়।
সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে মুগাবের উত্তরসূরী ধরা হচ্ছিলো। কিন্তু প্রেসিডেন্টের স্ত্রী গ্রেসও নিতে চান ক্ষমতার স্বাদ।
গ্রেস দেশটির যুব সম্প্রদায়ের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আর এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি।
এ দ্বন্দ্বের মধ্যে গত ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা মুগাবে সরকারের বেশ ক’জন মন্ত্রী এবং গ্রেসের সমর্থক ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের প্রধান কুদজাই চিপানাগাকেও আটক করে।
ওইদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সিবুসিসো মোয়ো বলেন, সরকারের কর্তৃত্ব নেওয়া সেনাদের উদ্দেশ্য নয়। প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা ‘অপরাধীদে’র দলকে লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
এরপর ওইদিন থেকেই নিজবাড়িতে ‘গৃহবন্দি’ অবস্থায় রাখা হয় মুগাবেকে।
বার্তা সংস্থা বিবিসি জানায়, জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সেনাবাহিনী মুগাবেকে পদত্যাগের চাপ দিচ্ছে। তবে তাতে তিনি রাজি হননি। নিজেকে এখনও জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট বলেই দাবি করছেন মুগাবে।
এদিকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবেকে গৃহবন্দি করার পরপরই তাকে ছেড়ে নামিবিয়া পালিয়ে গেছেন তার স্ত্রী পঞ্চাশোর্ধ্ব গ্রেস মুগাবে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে যাচ্ছে নামিবিয়া সরকার।
সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে ভালো কিছু হলে জনগণকে জানানো হবে অচিরেই।
মুগাবের শাসনে দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির অর্থনীতির পতন ছিল অব্যাহত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতির বদলে বিশৃঙ্খলা এবং ধস নামতে থাকে।
মুগাবে শাসনামলে অনেকে কোটিপতি হলেও সমাজের বাকি অংশে দারিদ্র্য বাড়তে বাড়তে তীব্র খাদ্যাভাবে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে ব্যাপকভাবে।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতো বেশি পরিমাণে নোট ছাপায় যে, জিম্বাবুয়ান ডলারের দাম অতিরিক্ত হারে কমে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পেলে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন মুগাবে। ক’বছর প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ১৯৮৭ থেকে আফ্রিকার দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭/ আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা
এমএ/