রোববার (১৯ মার্চ) চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সাইদুর রহমান ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
পরে রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আব্দুর রউফের হেফাজতে তাকে জামিন দেওয়া হয়। জামিনের শর্ত অনুসারে তাকে ঢাকায় অবস্থান করতে হবে এবং মামলার নির্ধারিত তারিখে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে।
সোমবার (২০ মার্চ) এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আসামি আব্দুল্লাহ-হেল বাকীকেও ট্রাইব্যুনালে থাকতে হবে।
এ মামলার চার আসামির মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল ওরফে জল্লাদ খালেক তদন্তকালেই গ্রেফতার হন। অন্য দু’জন হচ্ছেন- খান রোকনুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বুলারাটী গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ-হেল বাকীকে গ্রেফতার করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, রাজাকার বাকীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ০৮ ফেব্রুয়ারি চারজনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সাত অভিযোগ
এ মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বেতনা নদীর পাড়ে বুধহাটা খেয়াঘাটে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করেন। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী, মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে ধরে কমরউদ্দিন ঢালীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যান ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সাতক্ষীরা মহকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মৃতদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীর পাড়ে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র বুধবার বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ ৪-৫ জন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যান। পরে আর তার সন্ধান মেলেনি।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, সোহেল উদ্দিন সানা তার বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সঙ্গে নিয়ে পহেলা ভাদ্র বুধহাটা বাজার অতিক্রমের সময় রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সঙ্গী রাজাকারদের হাতে আটক হন। পরে তাদের ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সোহেল ও সানার সন্ধান আর মেলেনি।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ আষাঢ় সকাল ৭টার দিকে আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসেন নিজেদের বাড়ির পাশে হালচাষ করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে গোলাম হোসেন বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য তাকে ধরে নিয়ে পাশের পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করেন।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ০২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মো. বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙ্গুলের রগ কেটে দেন রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের জ্যেষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান একদল পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করেন। সেই মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছেন তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথণ্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেন। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটকে ধর্ষণ করেন। এছাড়া বৈকারি গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন চার পাকিস্তানি সৈন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর