তার করা প্রতারণা মামলায় বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) কায়সার কামালের তিনদিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। সেই রিমান্ড আবেদনেই আসামির সম্পর্কে এমন বক্তব্য ওঠে এসেছে।
কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক আওলাদ হোসেনের করা রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রাজনীতির সুবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের মাধ্যমে আসামির সঙ্গে বাদীর পরিচয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া গ্রেফতারের কয়েকদিন আগে পুলিশ কায়সার কামালকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বাদীর বাসায় আশ্রয় চান। বাদী সরল বিশ্বাসে তার শ্বশুর-শাশুড়ি, তার একমাত্র শ্যালক এবং স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আসামিকে আশ্রয় দেন।
এতে আরও বলা হয়, বাদীর স্ত্রী স্কয়ার হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান। রাজনৈতিক সম্পর্কের অপব্যবহার ও বাদীর স্ত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ ফেলে আসামি বাদীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সপ্তাহ তিনেক আগে বাদী দেখতে পায় কলাবাগান থানাধীন নর্থ সার্কুলার রোডে বাদীর স্ত্রী আসামির গাড়ি থেকে নামছে। এ বিষয়ে বাদী শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে আসামিকে বুঝানোর পরও তিনি শোধরাননি।
গত বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে আসামির গাড়ি ফলো করতে করতে কলাবাগান থানাধীন শেলটেক টাওয়ারের সামনে এলে বাদী দেখতে পায় তার স্ত্রী আসামির গাড়িতে ওঠছে। এরপর বাদী আসামির গাড়ির দরজা টান দিয়ে উপস্থিত জনগণের সহযোগিতায় তাকে ধরে ফেলেন। সংবাদ পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করেন।
আবেদনে বলা হয়, আসামি প্রতারণার মাধ্যমে বাদীর মন ও সুনামের ক্ষতিসাধন করেন। আটক পরবর্তী সময়ে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। ঘটনা সংক্রান্ত আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। আসামির এরূপ কর্মে বাদীর স্ত্রী সন্তানসহ সংসার ভাঙনে মুখে পড়েছে। আসামি তার দুর্দিনে আশ্রয়দাতার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, যা অনৈতিক ও প্রতারণার শামিল।
রিমান্ড শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, কায়সার কামাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক। যাদের কাছ থেকে মানুষ শিখবে, যাদের মাধ্যমে দেশের আইন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, তাদের এমন ন্যক্কারজনক কাজ জাতির জন্য দুভার্গ্য। বাদীর স্ত্রীর সঙ্গে তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত হন।
পরকীয়ার কথা বলতেই কায়সার কামালের পক্ষে থাকা বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন। তারা বলেন, এজাহারে এ ধরনের কোনো কথা উল্লেখ নেই। কায়সার কামাল একজন নিয়মিত অনুশীলন করা আইনজীবী। তিনি সুপ্রিম কোর্ট এবং ঢাকা বারের সদস্য। বাদী নিজেও একজন আইনজীবী, তিনি নিজেও একই দল করেন। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হযেছে।
তারা আরও বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদকসহ বাদী ও আসামির সঙ্গে বসেছি বিষয়টি সুরাহার জন্য। জামিনযোগ্য ধারায় মামলা। জামিন দেওয়া হলে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা বলে আমরা ভুল বোঝাবুঝির অবসান টানতে পারবো বলে কথা দিচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা উপস্থিত সব আইনজীবী তার জামিনদার হবো।
শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত কায়সার কামালকে কারাগারে পাঠান। তবে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে তাকে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
কেআই/এএটি