ফেনীর এক বাসিন্দা এ রিট করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান।
সোমবার (২৯ জুন) ইয়াদিয়া জামান জানান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট দাখিল করা হয়েছে।
ওই তিনটি হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা না করে ফেরত দেওয়া এবং অতিরিক্ত বিল আদায়ের ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট আবেদন করেন ফেনীর দাগনভূঁইয়ার জাঙ্গালীয়া গ্রামের মৃত তফাজ্জল হোসেনের ছেলে জেবুল হোসেন রয়েল।
রিট আবেদনে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, চট্টগ্রামের নিজাম রোডের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য সচিবকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে।
আবেদনকারীর অভিযোগ, তার মা মনছুরা বেগম (৬৭) দীর্ঘদিন অসুস্থ। গত ৩ বছর ধরে তার কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে। এ অবস্থায় গত ১ জুন তার জ্বর ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই তাকে নিকটস্থ চট্টগ্রামের নিজাম রোডের দু’টি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অনেক অনুরোধ করার পরও কিন্তু তারা ভর্তি করেনি।
রিট আবেদনে বলা হয়, একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয় আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হক (৬৭) নামের এক রোগীর কাছ থেকে অল্প কিছু সময়ে নেওয়া অক্সিজেন বিল বাবদ ৮৬ হাজার টাকা নিয়েছে। তিনদিন হাসপাতালে থাকার পর মোট বিল নিয়েছে আড়াই লাখ টাকা।
আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান জানান, সরকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতলের প্রতি দু’টি নির্দেশনা জারি করেছিলেন।
বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকের প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ-এর পর থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ডায়ালাসিসসহ চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীরা সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখার বিষয়ে বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একাধিক সভার মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও একাধিকবার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বারবার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এমতাবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশনা নির্দেশক্রমে জারি করা হয়েছে।
সব বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জরুরি চিকিৎসার জন্য আসা কোনো রোগীকে কোনোভাবেই ফেরত দেওয়া যাবে না। রেফার করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করে রেফার করতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে যেসব রোগী কিডনি ডায়ালাসিসসহ বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করছেন তারা কোভিড আক্রান্ত না হয়ে থাকলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে বা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুসারে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে আইনজীবী-চিকিৎসকরা রিট করেন। ওইসব রিটের শুনানির পর ১৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত বিষয়ে আদেশ দিয়েছিলেন। যেটি গত ১৬ জুন আপিল বিভাগে বহাল ছিল। কিন্তু এসব হাসপাতাল আদালতের আদেশ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার লঙ্ঘন করেছেন বলে জানান ইয়াদিয়া জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
ইএস/আরবি/