ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দারোয়ান, মালী, ঝাড়ুদারও পোলিং কর্মকর্তা!

ইকরাম-উদ দৌলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৫
দারোয়ান, মালী, ঝাড়ুদারও পোলিং কর্মকর্তা!

ঢাকা: নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে রাষ্ট্রের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

তাই বলে ঝাড়ুদার, মালী কিংবা দারোয়ানকে যদি পোলিং কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয় কেমন হবে বিষয়টি? আর সেই কাজটিই হয়েছে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে।



ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝাড়ুদার, মালী এবং দারোয়ানকে পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

তবে নিয়োগ প্রাপ্তরাই ওই দায়িত্ব পালনের অক্ষমতার কথা স্বীকার করে অব্যাহতি চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেই আবার আবেদন করেছেন।

অব্যাহতি চেয়ে আবেদনপত্রে মোট ১১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর কথা উল্লেখ আছে যারা সিটি নির্বাচনের বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছেন। তারা হলেন-মো. শাহজাহান (দারোয়ান), মো. শুক্কুর আলী (দারোয়ান), মো. মোজ্জামেল হক (দারোয়ান), মো. জামাল (নৈশ প্রহরী), মো. সামসুল হক (দারোয়ান), মো. একরামুল হক (মালী), মো. কবীর হোসেন (সুইপার), পারুল আক্তার (আয়া), মনোয়ারা বেগম (পিয়ন), দেলোয়ারা খাতুন (ঝাড়ুদার) ও রুনা আক্তার (ঝাড়ুদার)।

আবেদনপত্রে তারা কখনও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নিজেদের সামান্য অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন কর্মচারী দাবি করে-নির্বাচনী বুথে ভোটারদের আঙুলে কালি লাগানো ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন।

এ জন্য তারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে নিয়োগপ্রাপ্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। ওই আবেদনের একটি কপি তারা বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে ইসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বাংলানিউজকে বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু তাই বলে অক্ষরজ্ঞানহীন কাউকে তো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার বিধি ৮ অনুযায়ী-রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনের জন্য পোলিং কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের, তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারীর তালিকা পাঠাতে অনুরোধ করে থাকেন।
 
রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের পাঠানো তালিকা থেকে প্যানেল প্রস্তুত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি কমিশনের অধীনে নিয়োগ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের লিখিতভাবে অনুরোধ করেন এবং তার একটি কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠান।

এই বিধি মোতাবেক রাজধানীর হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর তালিকা চেয়ে অনুরোধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। অধ্যক্ষ তালিকা পাঠালে ঝাড়ুদার, মালী, দারোয়ানকে পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ২৭৭ জন।

এদিকে, পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রাপ্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মচারীদের করা আবেদনপত্রে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনও একটি নোট দেন।

অব্যাহতি আবেদনপত্রের ডান দিকের কোণায় তিনি হাতে লিখেন-‌আবেদনকারীদের অক্ষরজ্ঞান কম। দায়িত্ব পালনে তাদের দিয়ে শুধু কালি ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো কাজ করানো কষ্টকর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৫
ইইউডি/টিআই/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।