বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বকে অবাক করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারাবাহিকভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ-এশিয়ার এবং নিম্ন-আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম ও ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হবে।
“জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১ হাজার ৪৬৬ ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালে ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। এখন তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫-১৬ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনা। ”
মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকায় মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ডাবল ডিজিটে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ।
“২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা জাতীয় রপ্তানি নীতি ঘোষণা করেছি এবং বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছি। ”
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও ওপর।
“বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। ”
এসময় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে জানিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
“২০২১ সালের মধ্যে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। কয়েকটি বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। ”
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আমরা পরিবেশ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং প্রত্যন্ত চরাঞ্চলসহ সারাদেশে প্রায় ৪৫ লাখ সোলার হোমসিস্টেম বসানো হয়েছে। মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদন করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাবনার রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
ভাষণের শুরুতেই তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। স্মরণ করেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হতাহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এটি/এইচএ/
** সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান
** আ’লীগই পারবে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে
** সব দরিদ্র পরিবার পাবে স্বাস্থ্যকার্ড
** প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
** সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আরও ১৪২টি কর্মসূচি
** প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি কিনা, সে ভার আপনাদের ওপর