রাষ্ট্রীয় এ অনবদ্য স্বীকৃতিতে এখন অভিনন্দনে-শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন। তার মধ্যেও নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনাকে ভুলে থাকেননি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘একুশে পদক পেয়ে ভালোই লাগছে। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও বেশি বেশি কাজ করতে ও ভূমিকা-অবদান রাখতে প্রেরণা যোগাবে এ পদকপ্রাপ্তি’।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দুঃসহ ক্রান্তিকাল প্রতিরোধে প্রতিবাদে-সংগ্রামে দ্রোহের বন্ধুর পথে হেঁটেছিলেন ১৯৬১ সালের ৫ জুন খুলনায় জন্ম নেওয়া স্বদেশ রায়। খুনিদের হটানোর সশস্ত্র আন্দোলনে সহায়তার পথ ধরে যোগ দেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। পাইকগাছা, খুলনা, বাগেরহাটের শিক্ষা জীবনকালে এজন্য তার ওপর জারি হয় হুলিয়াও।
এর মধ্যেও ১৯৭৭ সালে পাইকগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৮১ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন।
এরপর স্বদেশ রায় চলে আসেন ঢাকায় আর ১৯৮৩ সালে এরশাদের স্বৈর শাসনামলে নিজের ভেতরকার দ্রোহের উচ্চারণের অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন কলমকে। পরিণত হন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও রক্ষা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্ত স্বদেশ গড়বার বলিষ্ঠ, সত্যনিষ্ঠ, সাহসী সাংবাদিকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক করার পর আইসিএম বিষয়ে এবং এমবিএ পড়েন তিনি। ১৯৮৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ হয় তার।
শুরুতে সে সময়কার জনপ্রিয় ‘সাপ্তাহিক সাংবাদিক’ ও ‘সচিত্র সন্ধানী’তে কিছুদিন রিপোর্টার হিসেবে কাজ করলেও স্বদেশ রায়ের তীক্ষ্ণ কলমের প্রকৃত ধীশক্তি ফুটে ওঠে যায় যায় দিনে। আলোড়িত-আলোচিত সাপ্তাহিক কাগজটিতে তার জনপ্রিয় সংবাদ-প্রতিবেদন, কলাম এবং সম্পাদকীয় নিবন্ধগুলো সে সময় ভিত কাঁপিয়ে দেয় স্বৈরাচার ও তাদের দোসর স্বার্থান্বেষী মুক্তবুদ্ধিবিরোধী বিভিন্ন মহলের।
এরপর দৈনিক রূপালী ও দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায়ও কাজ করেছেন এখনকার দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়।
সুদীর্ঘ এ সাংবাদিকতা জীবনের সব ধাপেই বিরুদ্ধ সময়ে দাঁড়িয়ে তার সাহসী উচ্চারণ সাধারণের মনে আশা জাগিয়েছে। তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দিক নির্দেশনা, সমাজ চিন্তা, সংস্কৃতির বোধ ও গবেষণা পাঠককে মুগ্ধ করে রাখে।
জীবনের বিচিত্র এতোসব অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ স্বদেশ রায় বাংলানিউজকে আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যে কাজই করেছি, সংবিধানের মূল চার নীতিকে মেনে চলেছি। আমরা যেহেতু সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ, সেহেতু এ মূল নীতিগুলো সাংবাদিকতারও মূল নীতি। একই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমগুলো মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা ও সুশিক্ষা গড়ে তোলে’।
‘সাংবাদিকতার কাজ হচ্ছে, সংবিধানের মূল চার নীতির আলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ, মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন, সচেতন ও সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা’- উল্লেখ করেন স্বদেশ রায়। একইসঙ্গে অতীত দিনের মতোই আগামীতেও এ কাজ করে যাবেন বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন।
সাংবাদিক স্বদেশ রায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন কলামিস্ট হিসেবেও। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে কলাম লিখছেন তিনি। বিদেশের ১০টিরও বেশি সাপ্তাহিক ও দৈনিকে নিয়মিত তার কলাম ছাপা হচ্ছে।
গালফ নিউজ, দ্য হাফিংটন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্বদেশ রায়ের কলামের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশ করেছে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী স্বদেশ রায় গদ্য এবং কবিতা সাহিত্যেও সাবলীলভাবে বিচরণ করছেন।
স্বদেশ রায়ের স্ত্রী চিত্রা রায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং একমাত্র ছেলে সফেন রায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত।
সাংবাদিকতায় স্বদেশ রায়ের সঙ্গেই একুশে পদক’২০১৭ এ ভূষিত হতে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে বসবাসরত আরেক বরেণ্য সাংবাদিক আবুল মোমেন। তারা দু’জনসহ মোট ১৭ জন বিশিষ্টজন এবারের পদকটি পাচ্ছেন। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছে।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পদক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এএসআর