দখিনা বাতাসের পরশ গায়ে মেখে ডুমুরিয়া-খুলনা সড়ক বেয়ে সাইকেলে ছুটে চলছে বরযাত্রীর দল। এমন দৃশ্য দেখে পলকহীন চোখ আটকে যাচ্ছে পথচারীদের।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই অভিনব বরযাত্রা দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে ছিলেন পথচারীরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যাত্রাবিরতির সময় কেউ কেউ বরকে নিয়ে তুলেছেন সেলফি। আর বরযাত্রী সাইকেল আরোহীদের মাঝে ছিল ভিন্ন রকম উচ্ছ্বাস।
বর শরিফুল ইসলাম হিরণ (২৮) নিজে সাইক্লিস্ট। যে কারণে বিয়ের দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য এমন ব্যতিক্রম ধর্মী আয়োজন। হিরণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের কেওড়া' ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এর মালিক। হিরণ ডুমুরিয়ার রাজিবপুর গ্রামের ব্যাংকার শেখ মো. রাশেদুল ইসলামের ছেলে। বিয়ে করতে আসছেন খুলনার পুরানো গল্লামারীর কুবা মসজিদ সংলগ্ন কন্ট্রাক্টর আব্দুল মুতালিব তালুকদারের মেয়ে তাসনিয়া তাবাস্সুম শিউলীকে। যিনি সম্প্রতি সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। খুলনা মহানগরীর ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বিয়ে।
কেন সাইকেলে বিয়ে করতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে হিরণ বাংলানিউজকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল সাইকেল চালিয়ে সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমন করবো। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি ২০১৪ সালে। সাইকেলে যাত্রার পাশাপাশি লিফলেটের মাধ্যমে এবং জনবহুল জায়গায় গিয়ে লোকজনকে বুঝিয়েছি জন্মগত ক্লাবফুট, ঠোঁট ও তালুকাটা সম্পর্কে।
শিক্ষিত তরুণ ব্যবসায়ী হিরণ বলেন, অনেক ভাবেই বিয়ে করতে বরযাত্রী যাওয়ার প্রচলন আছে এদেশে। কেউ শখ মেটাতে হেলিকপ্টার, পালকি, ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়িতে করে বিয়ে করতে যায়। আবার কেউ কেউ বরযাত্রী যাওয়ার জন্য নৌকা কিংবা লঞ্চ ব্যবহার করেন। আমি যেহেতু সাইক্লিস্ট তাই বাইসাইকেলে চড়ে বিয়ে করতে এসেছি। সাইক্লিং আমার নেশা। পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সবার হৃদয়ে পৌছে দেয়ার জন্যই শখের বশেই এ আয়োজন।
কতজন বর যাত্রী আসছেন জানতে চাইলে হিরণ বলেন, মোট বরযাত্রী ৬০ জন। তার মধ্যে ২০ জনের মতো বাইসাইকেলে। যারা বৃদ্ধ, নারী-শিশু ও সাইকেল চালাতে পারেন না তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কনে কিভাবে বাড়িতে নেবেন প্রশ্নের জবাবে হিরণ হেঁসে দিয়ে বলেন, তাকে আমার সাইকেলে তোলে নেওয়ার ইচ্ছা আছে।
এদিকে বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে মহানগরীর ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কমিউনিটি সেন্টারে বাইসাইকেল বহর নিয়ে শেরওয়ানী ও পাগড়ি পরা বর পৌছানোর পর অভিভূত মানুষজন রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে যান তাদের দেখতে। কনের বাড়ির লোকজনও পেলেন নতুন আমেজ। হলো ভিন্ন রকমের আনন্দ ফুর্তি। খুলনায় অতীতে কোনো বিয়ের বরযাত্রা এভাবে বাই সাইকেলযোগে হয়েছে কি-না নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে বরের ছোট বেলার বন্ধু বরযাত্রী বাহারুল ইসলাম জাফনিন বাংলানিউজকে বলেন, একঘেয়ে জীবনে ভিন্ন কিছু করতেই এমন আয়োজন । সঙ্গে আছে সাইকেল-প্রেম । এই আয়োজনে শতভাগ সমর্থন ছিল হিরণের বন্ধুদের। সাইকেল চালিয়ে দলবেধে যেখানে দেশ ঘুরেছেন সেখানে ডুমুরিয়া থেকে খুলনার ২৫ কিলোমিটার পথ আর কি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
এমআরএম/বিএস