চিংড়ি মাছে অপদ্রব্য পুশ করা নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ‘কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে’ শিরোনামে বাংলানিউজে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের ধারাবাহিকতায় ঢাকার সোয়ারীঘাট ও শ্যামবাজার সরেজমিনে যাওয়া হয়।
শুক্রবার সকালে সোয়ারীঘাটে বাজার ঘুরে ঘুরে দেখা হয় চিংড়ির বিকিকিনি।
পাশ থেকে আরেক ব্যবসায়ী এসে নিজস্ব কায়দায় একটি চিংড়ির গায়ে দুই খোঁচা মেরে জেলি বের করে দিয়ে বললেন, ‘ভাই, ৬০০ টাকার মাল, সাড়ে ৩০০ টাকায় লইবেন, জেলি তো থাকবোই। ’
প্রাথমিকভাবে দামের ভিন্নতা লক্ষ্য করেও ভেজালযুক্ত চিংড়ি ও ভেজালমুক্ত চিংড়ি শনাক্ত করা যেতে পারে। তবে সব সময় যে দামই ভেজাল-নির্ভেজাল শনাক্তের মাপকাঠি হবে সেটা কিন্তু নয়। চড়া দামে নিম্নমানের জেলিযুক্ত চিংড়ি বিক্রির অভিযোগও আছে ক্রেতাদের। যে কেউ একটু কৌশলি হলে ভেজাল চিংড়ির কানসা ও দেহের খাঁজের ভেতর-ভেতরে জেলির অস্থিত্ব খুঁজে পাবেন।
এ বাজারে গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবাক হওয়ার বিষয় হলো- একই সাইজের চিংড়ি দোকানভেদে ৪০০, ৪৫০, ৫০০, ৫৫০ ও ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন চিংড়ি ব্যবসায়ী জানান, ‘ভেজাল মালের দাম তো কম, আর ভালো মালের দাম বেশি। ’
স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী জানান, সোয়ারীঘাটের বেশির ভাগ মাছ আসে চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, ভোলা ও চাঁদপুর থেকে। আর ভেজাল মাছে উৎপদান স্থল থেকেই অপদ্রব্য পুশ হয়ে আসে। এসব মাছ কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে চলে যায়। সোয়ারীঘাটে তুলনামুলক মাছের দাম কম বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে মাছ কিনে থাকেন।
এ বাজারে রুই-কাতলা, মাগুর, মিরর কার্প, তেলাপিয়া, টাকি, শল, গলদা চিংড়িসহ প্রায় সব মাছই বেচাকেনা হয়। বাজারের একপাশে লেখা ‘ফরমালিনমুক্ত মাছের বাজার’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকারী ব্যবসায়ী মো. বশির বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বাজারে ফরমালিন মেশানো হয় না। তবে মাছের উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ফরমালিন মেশানো হয় কিনা সেটা তো আমরা জানি না। ’
জিঞ্জিরা থেকে সোয়ারীঘাটে মাছ কিনতে এসেছেন আলমগীর হোসেন (৩৮) নামে একব্যক্তি। তার পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বড় সাইজের ৫ কেজি গলদা চিংড়ি কিনেছেন ৫১০ টাকা কেজি দরে। ভেজালমুক্ত চিংড়ি কি কিনতে পেরেছেন- এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি জানান, ভেজাল শনাক্ত করাটা তো মুশকিল ভাই।
এক খুচরা ব্যবসায়ী সোয়ারীঘাটে এসে মাঝারি আকৃতির ৪ কেজি গলদা চিংড়ি কিনেছেন ৪১০ টাকা কেজি দরে। তিনি তা রায়েরবাজারে সাড়ে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন বলে বাংলানিউজকে জানান।
ফরমালিন ও চিংড়িতে জেলিযুক্ত মাছ এই বাজারে নেই বলে দাবি করেন মাছের আড়তদার ইসমাইল হোসেন (৫০)। তিনি বলেন, ‘আগে এই বাজারে ফরমালিনযুক্ত মাছ পাওয়া যাইতো। তয় এখন আর নাই। ’
শুক্রবার সকাল ৯টার পর শ্যামবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু মাছের দোকানে মাছ বেঁচাকেনা হচ্ছে। তবে চিংড়ির দামের এখানে সোয়ারীঘাটের সঙ্গে তেমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। ভেজাল আর জেলি মেশানো আশঙ্কা তো আছেই।
এদিকে, পুরান ঢাকার ওয়ারীতে সুপারশপ মীনা বাজার ও মালিবাগ-শান্তিবাগ এলাকার সুপারশপ অ্যাগোরায় সরেজমিনে গিয়ে গলদা চিংড়ির বেশ কদর লক্ষ্য করা যায়। মীনা বাজারে ৪৫০ টাকা এবং অ্যাগোরাতে ৪৬৫ টাকা কেজি করে চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। তবে ওয়ারীর সুপারশপ বিগবাজারে গিয়ে কোনো মাছই পাওয়া যায়নি। বিএসটিআই’র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এসব সুপারশপের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে।
চিংড়ির উৎপাদন ও বিপণন কেন্দ্রগুলোতে চিংড়ির দেহে ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের পদার্থ মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। আর সেখান থেকে চিংড়ি কিনে নগরবাসীর কাছে বিক্রি করছে ঢাকার সুপারশপগুলো। এমন ভেজালি পরিস্থিতিতে তাদের চিংড়ি কতটা নিরাপদ এমন প্রশ্ন করা অবান্তর নয় কী!
** বাইছা লন, ক্যানসার ছাড়া লন
** সব বাজারেই জেলি চিংড়ি!
** কাপড়ের বিষাক্ত নীলে চকচকে চিংড়ি
** শক্ত খোলসেই পোয়াবারো চিংড়ি ভেজালিদের
** চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!
** চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও
** কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে
** এ যেন টাকা দিয়ে মৃত্যু কেনা !
** মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
টিআই/জেডএম