বুধবার (১ মার্চ) মধ্যরাতের পর থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাজুড়ে চরম অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চালায় ওই জঙ্গি চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে এবং তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে এ অরাজকতা চালানোর অপচেষ্টা চালাতে থাকে তারা।
এ এলাকার বাসিন্দারা জানান, এলাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১২টা বাজলেই এখানকার প্রায় সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মধ্যরাতের পর তেমনি একটি বন্ধ ফটকের ফোকর গলে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন এক শিক্ষার্থী। এতে সেখানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক আনসার সদস্যের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। এক পর্যায়ে মারামারিতে জড়িয়ে তারা দু’জনই আহত হন। পরে তাদের নিকটস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, যদিও কারো আঘাতই গুরুতর ছিল না। এ বিষয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার নাজনীন জানান, অর্গান ড্যামেজ নেই, কোনো ফ্রাকচারও নেই শরীরে। এখন আপাতত যেটা আছে সেটা হলো মাসকিলোস্কেলেটাল পেইন (অস্তি ও মাংসে ব্যথা)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহত শিক্ষার্থী তপু ও আনসার সদস্য যখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, তখন এই ঘটনাকে পুঁজি করে তাণ্ডব চালানোর অপচেষ্টায় মেতে ওঠে জঙ্গি চক্রটি। ফোনে-ফোনে আর ফেসবুকে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দলে দলে ঢুকে পড়ে নিরিবিলি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়।
এরপর ‘বসুন্ধরা গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মীর রডের আঘাতে আহত হয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তপু মৃত্যুশয্যায়’- এমন গুজব ছড়িয়ে সরল শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে ওই জঙ্গি চক্র। কয়েকশ’ জঙ্গি সমবেত হয়ে হামলা চালায় বসুন্ধরা গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স-২ এ।
বয়সে তরুণ ওই জঙ্গিরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বসুন্ধরা এলাকার বিস্তীর্ণ সড়কের ফুটপাত আর ডিভাইডারেও। খবর পেয়েই বিপুলসংখ্যক র্যাব ও পুলিশ সদস্য মধ্যরাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান এক রাউন্ড গুলি বা টিয়ারশেল পর্যন্ত না ছুঁড়ে। এমনকি একবারও লাঠিচার্জ না করে তারা ওই তরুণদের শান্ত করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান করেন।
প্রথমে জঙ্গিবাদীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সরল শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দিলেও রাত ৩টার দিকে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন। ফলত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘরে ফিরতে থাকেন। আর এতে জঙ্গিরাও তখন ৠাব-পুলিশের প্রতিরোধের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু এলাকা ছাড়লেও জঙ্গিরা মেতে ওঠে নতুন ষড়যন্ত্রে।
রাত ৪টার দিকে তারা ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ-পিইউএসএবি’ নামে ভূঁইফোড় এক ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থী তপুর ওপর হামলা হয়েছে বলে অপপ্রচার চাঙ্গা করে তোলে। নানা ধরনের উস্কানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকালে আবারও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমবেত হওয়ার আহ্বান জানাতে থাকে।
এক সন্দেহভাজন তার ফেসবুকে ভিডিও ক্লিপ আপলোড করে আহ্বান জানান, ‘ইনশাআল্লাহ এর কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সকলেই যেন কালকে এনএসইউতে এক সাথে হই। আপনারা আপনাদের প্রতিটি ফ্রেন্ডকে শেয়ার করুন। আমার ভিডিও শেয়ার করতে হবে না। তাদের জানান কাল সকাল ১০টার মধ্যে সবাই যেন এনএসইউতে থাকে। ইভেন আইইউবির কোন ছেলেপেলে যদি থাকে তারাও যেন এক হয়। ’ফেসবুকে-ম্যাসেঞ্জারে সকাল পর্যন্ত চলে তাদের উস্কানিমূলক এমন প্রচারণা। কিন্তু অপপ্রচারকারীরা চেহারা আড়াল করতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নামে কর্মসূচিতে।
সকাল ১০টার পর থেকে আবারও সমবেত হতে থাকে জঙ্গিরা। নেমে পড়ে ভাঙচুরের চেষ্টায়। হামলা চালায় বিভিন্ন ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখায়। ভাঙচুরে অবশ্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের তারা সম্পৃক্ত করতে পারেনি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে ওই তরুণদের ব্যবহার করা ভাষা আর শব্দচয়নে স্পষ্ট হয় তাদের মতাদর্শ।
এরপরই তারা ভাঙচুর করে বসুন্ধরা গ্রুপের করপোরেট অফিস। এ সময় খুব তৎপর ছিল ৫-৬ জন তরুণ। যাদের মুখে বাঁধা ছিল কালো ও কমলা কাপড় ও রুমাল। নিজেদের নিরাপদ রাখতে তারা পরিচয় গোপন করারও কৌশল নেয়। এমনকি চতুর জঙ্গি চক্রে জড়িতরা ফেসবুকে আপলোড করা বেশ কিছু পোস্টও মুছে ফেলে। সেখানেই জানায়, নিরাপত্তার স্বার্থে এগুলো মুছে ফেলা জরুরি।
এদিকে, যাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামলাকারীরা এই তাণ্ডবকে বৈধ করার অপচেষ্টা করেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নয়। তারা বহিরাগত। ’
জঙ্গি চক্রটি বিকেলে আবারও হামলা চালায় পুলিশের ওপর। যদিও অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭/আপডেট ২১৪৮ ঘণ্টা
এসআই/এইচএ/